রহম্যানিয়া: নেড়ি কুকুরের ইন্টারভিউ
শফিক রেহমান
চলতি বছরের শরুতে বিশ্বের বহু স্থানে কোটি কোটি মানুষ ভুগছিল রহম্যানিয়া(Rahmania)-তে। ম্যানিয়া (Mania) হচ্ছে এক ধরনের প্রচন্ড উন্মাদনা যা মানবজাতির যে কোন বিশাল অংশকে যে কোন বিষয়ে সাময়িকভাবে বিকারগ্রস্থ করতে পারে। যেমন ষাট ও সত্তরের দশকে ছিল বিটলম্যানিয়া (Beatlemania) ।ওই সময় বৃটিশ পপ গ্রুপ দি বিটলস-এর গানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ মত্ত ও প্রভাবিত হয়েছিল। অতি সম্প্রতি আমেরিকায় দেখা গিয়েছে ওবাম্যানিয়া (Obamania) যা শীর্ষে উঠেছিল ব্যারাক হুসেইন ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হওয়ার সময়। তার আগে শুধু আমেরিকাতেই নয়, বিশ্বের বহু দেশের কোটি কোটি মানুষ হয়েছিল ওবামাভক্ত এবং প্রার্থনা করেছিল তিনি যেন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বচিত হন। ওবাম্যানিয়া এখন কিছুটা কমেছে। এরপর গত ফেব্রুয়ারিতে আরেক ম্যানিয়ায় আক্রান্ত হয় বিশ্ববাসী। এই নতুন ম্যানিয়া হচ্ছে রহম্যানিয়া। তবে ওবামার মতো এক দেশের কোনো এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক অথবা বিটলেসের মতো একই দেশের চার ব্যক্তি কেন্দ্রিক ম্যানিয়া এটি নয়। রহম্যানিয়া দুই দেশের এবং বহু ব্যক্তি কেন্দ্রিক। এই দুটি দেশ হচ্ছে ইনডিয়া এবং বাংলাদেশ। এই ম্যানিয়ার উৎস ব্যক্তিরা হচ্ছেন ইনডিয়ায় এ আর রহমান (আল্লা রাখা রহমান) এবং বাংলাদেশে প্রয়াত এস এম রহমান (শেখ মুজিবুর রহমান) ও প্রয়াত জেড রহমান (জিয়াউর রহমান)। দুই প্রয়াত ব্যক্তির নাম একটি বিতর্কিত কবিতায় রুপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যথাক্রমে এল রহমান(লতিফুর রহমান) ও এ রহমান(আব্দুর রহমান) রুপে। এস এম রহমান রহমান (ওরফে এল রহমান) এবং জেড রহমান(ওরফে এ রহমান)ছাড়াও বাংলাদেশে গত ফেব্রুয়ারিতে রহম্যানিয়ার আরো দুটি উৎস ছিলেন মিসেস কে রহমান ও মিস্টার এম রহমান। আশ্চর্যের বিষয়, আমেরিকায় হলিউড-এর কোডাক থিয়েটারে ২২ ফেব্রূয়ারি রোববার রাতে অস্কার পুরস্কার ঘোষণার সময় এ আর রহমান ম্যানিয়া যখন শীর্ষে পৌছাচ্ছিল প্রায় ঠিক সেই সময় কয়েক হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশে ঢাকায় সচিবালয়ে এস এম রহমান (ওরফে এল রহমান) ম্যানিয়া শীর্ষে পৌছায়। তফাত এই যে, হলিউডে ইনডিয়ান সুর স্রষ্টা এ আর রহমান দুটি অস্কার পুরস্কার পান আর হাজার মাইল দুরে ঢাকায় বাংলাদেশি কবিতা স্রষ্টা ও তথ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব এটিএম ফজলুল করিম ওরফে এ করিম তার পচিশ বছরের চাকরি হারান। এই দুটি ঘটনার আগে বৃটিশ এবং আমেরিকা জুড়ে গভীর ও ব্যাপক জল্পনাকল্পনা চলছিল স্লামডগ মিলিয়নেয়ার (slumdog Millionaire) মুভিতে সুর এবং গান সৃষ্টির জন্য এ আর রহমান অস্কার পুরস্কার পাবেন কিনা। আর বাংলাদেশে জল্পনাকল্পনা চলছিল বাগানে ফুটে আছে অনেক গোলাপ নামে একটি কবিতার বইয়ে আলুবোখারা শীর্ষক কবিতাটির জন্য এটিএম ফজলুল করিম ওরফে আবু করিম চাকরিচ্যুত হবেন কিনা। এর আগেই আবু করিমের এই বই বাজেয়াপ্ত ও তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে যুবলীগ, আওয়ামী ওলামা লীগসহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন সোচ্চার হয়েছিল। সেই রোববার ২২ ফেব্রুয়ারীতেই আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে যুবলীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে আবু করিমের অপসারনের জন্য ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়েছিল। এ কবিতার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের মানহানি করা হয়েছে এই অভিযোগ এনে এটিএম ফজলুল করিমকে আসামি করে রোববার একটি মামলাও করেছিল আওয়ামী ওলামা লীগ। এছাড়া বাংলা একাডেমির বই মেলায় বইটির প্রকাশনা সংস্থা সূচিপত্র-এর স্টলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল আগেই। এর স্বত্বাধিকারী সাইদ বারী-কে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আধা ঘন্টারও বেশি সময় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। এসবের ফলে সচিবালয়ের সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে আলোচিত হচ্ছিল কবিতাটি এবং আমলা কবির ভবিষ্যৎ। আওয়ামীপন্থী দনৈক পত্রিকাগুলো এসব খবর দিয়ে প্রকারান্তরে আমলা কবির চাকরিচ্যুতির সম্ভাবনা সমর্থন করলেও তারা কবিতাটির কোনো অংশ প্রকাশ করেনি। কিন্তু দেশবাসীর কৌতুহল মেটানোর জন্য আওয়ামী বিরোধী দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি ওই বিতর্কিত সুদীর্ঘ কবিতাটির সারাংশ ছেপেছিল। যেমন দৈনিক আমার দেশ। সংক্ষেপিতভাবে দৈনিক আমার দেশের ওই রিপোর্ট ছিলঃ আলুবোখারা নামের কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে লতিফুর রহমান নামে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে আলুবোখারা উপাধি দেয়া হয়েছে। কবিতায় শেখ মুজিবের বড় ছেলে শেখ কামালকে কমলাকলি, মেজ ছেলে শেখ জামালকে জামকলি এবং ছোট ছেলে শেখ রাসেলকে রসকলি নামে আখ্যায়িত করে তাদের বিষয়ে কবিতা লেখেন আবু করিম। তিনি তার কবিতায় লেখেন যে, তখন বোখারায় একজন চালাক-চতুর নেতা আবির্ভূত হলো । এই নেতার নাম লতিফুর রহমান। বোখারার জনগন ছিল খুবই আবেগ প্রবন। যে কোনো কিছু বড়িয়ে বলার প্রবনতা ছিল তাদের সাধারন বৈশিষ্ট্য। লতিফুর রহমানের আগে তাদের নিজেদের কোনো একক নেতা ছিল না। লতিফুর খুব ভালো বক্তৃতা করতে পারতো। সে বোখারা ভাষায় ফুলঝুরির তোড়ে অন্য সব নেতাকে ভাসিয়ে দিল। বোখারায় আপামর জনগন তাদের প্রিয় খাদ্য আলুর কথা ভেবে লতিফুর রহমানকে নাম দিল আলুবোখারা। কাকস্তানের সহায়তায় বোখারা স্বাধীন হওয়ার পরই আলুবোখারা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলো। বিলাতের প্রধানমন্ত্রী ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে থাকেন। সুতরাং ১০ সংখ্যাটি আলুবোখারার জন্য উত্তম সংখ্যা ভেবে সে জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলো। দেশের জনগন তাকে রাজমুকুট পরিয়ে দিল। আলুবোখারা সিংহাসনে আরোহণের পর পরই কাকস্তানের রানীর সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি সম্পাদন করলো। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট যেদিন কাকস্তান স্বাধীনতা লাভ করেছে সেদিন আলুবোখারা ও তার তিন পুত্রকে হত্যা করা হয়। তাছাড়া আলুবোখারার অন্যান্য অনেক আত্মীয়কেও হত্যা করা হয়। রফিউল্লা নামে আলুবোখারার অনুগত যে সেনাপ্রধান ছিল তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিদেশে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সৈন্যবাহিনীর উপ-প্রধান আবদুর রহমান সৈন্যবাহিনীর দায়িত্ব লাভ করলো। এই কবিতাটির বিষয়ে প্রথম সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আমাদের সময়-এ। ওই সংবাদটির শিরোনাম ছিল তথ্য সচিব আবু করিমের কবিতায় আলুবোখারা ও লতিফুর রহমান আসলে কে? দৈনিক আমাদের সময়ের কাছে ২১ ফেব্রুয়ারিতে আবু করিম একটি প্রতিবাদ চিঠি পাঠান। এই চিঠি আমাদের সময় ছাপেনি। তবে তারা জানায়ঃ তথ্য সচিব প্রতিবাদপত্রে তার কবিতাটি তিন বছরের পুরনো রচনা এ কথা বললেও এটা যে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ২০০৮ সালে তা এড়িয়ে গিয়েছেন। তথ্য সচিব তার কবিতাকে রুপক আশ্রয়ী স্বীকার করলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার সম্পর্কিত রুপক আশ্রয়ী অংশটির কোনো সাহিত্যিক ব্যাখ্যা উল্লেখ করেননি। অনেক পাঠকই বলবেন, আবু করিমের প্রতিবাদ চিঠিটি পুরোটা প্রকাশ করলে জানা যেত কবির মনে কবিতাটি লেখার সময় ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এ আসলে কোন মনমানসিকতা কাজ করেছিল। সেই সময় বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার ক্ষমতায় ছিল। আবু করিম কি বিএনপির মনোরঞ্জনের জন্য, তার পদোন্নতির বা পদ মেয়াদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কবিতাটি লিখেছিলেন? বাংলাদেশে অনেক আমলা ও সেনাপতি তাদের লেখনী শক্তিকে যে এই ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রয়োগ করেছেন তা অনেকে জানেন। যদি আবু করিম তার নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ প্রচারের লক্ষ্যে গদ্য কবিতাটি লিখে থাকেন তাহলে বলতে হবে, তার অপরাধের মাত্রা কম কিন্তু সাহিত্যিক দুর্বলতা বেশি। এক্ষেত্রে তার অপরাধ হবে সরকারি চাকরিতে থেকে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক মত প্রকাশ করা । তবে এ দেশে যেহেতু অনেক সরকারি কর্মচারি এবং কিছু সেনাপতি এই অনিয়মটি করে থাকেন সেহেতু তার অপরাধের মাত্রা কম এমনটা গন্য করা যেতে পারে। আবু করিমের সাহিত্যিক দুর্বলতা যে কতো গভীর তা এই কবিতার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। রুপক আশ্রয়ী স্যাটায়ার লেখা অত্যন্ত দুরুহ কাজ। অতীত পশ্চিম বাংলার রাজশেখর বসু (পরশুরাম), সাপ্তাহিক শনিবারের চিঠি-র সম্পাদক দীপ্তেন্দ্রকুমার স্যানাল এবং তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তানের মাসিক অগত্যা-র সম্পাদক ফজলে লোহানী, এই গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া স্যাটায়ার লেখক কেউ ছিলেন না। আবু করিম যদি তাদের লেখা পড়তেন তাহলে এই কঠিন কাজে লিপ্ত হতেননা। আবু করিম হয়তো জানেন ইংরেজি সাহিত্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান স্যাটায়ার লেখক ছিলেন জনাথন সুইফট (১৬৬৭-১৭৪৫)। তার পিতা-মাতা ছিলেন ইংরেজ এবং তার জন্ম হয়েছেল আয়ারল্যান্ডে-এ। ১৭১৪ সালে ইংল্যান্ডে টোরি পার্টি-র শোচনীয় পরাজয়ের পরে বিশ্ববিখ্যাত রাজনৈতিক স্যাটায়ার গালিভার্স ট্রাভেলস (১৭২৬) বইটি তিনি লেখেন। এই কালজয়ী স্যাটায়ারে তিনি রাজনৈতিক পার্টি এবং ধর্মীয় বাদানুবাদকে সমালোচনা করেছিলেন। আবু করিম যদি এ বইটি আবার পড়ে দেখেন তাহলে বুঝবেন রুপক আশ্রয়ী রজনৈতিক সমালোচনার ফর্মটি কি হওয়া উচিত। গালিভার্স ট্রাভেলস একদিকে একটি রাজনৈতিক রচনা, অন্যদিকে এটি একটি আ্যাডভেঞ্চার কাহিনীও বটে। একটি রোমাঞ্চকর উপন্যাস রুপেও বইটি জনপ্রিয় হয়ে আছে। কিন্তু আবু করিমের কবিতাটি কি রুপক হয়েছে? সন, তারিখসহ যেসব ঘটনার বর্ণনা তিনি দিয়েছেন সেসবই তো বাস্তব, এখানে রুপক কোথায়? সবই তো আবু করিম ফ্ল্যাটলি বলেছেন। এখানে ব্যঙ্গাত্মক লেখার ধার কোথায়? তাছাড়া রাজনীতি বাদ দিলে কবিতাটি কি গালিভার্স ট্রাভেলস-এর মতো একটি সাহিত্যকর্ম রুপে দাড়াতে পারবে? যেহেতু আবু করিমের লেখা দুর্বল সেহেতু এটি উপেক্ষিত হওয়াটাই সঙ্গত ছিল। কিন্তু তা হইনি। বরং বইয়ের স্টল বন্ধ করে দিয়ে, মামলা করে এবং বাধ্যতামুলক অবসর দিয়ে সদ্য সূচিত আওয়ামী সরকারের আমলে বাকস্বাধীনতা কতোটুকু থাকবে সেই সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই সংশয় আরো বেড়েছে চলতি সপ্তাহে সরকারের নির্দেশ ইউটিউব ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ায়। অপাতদৃষ্টিতে এস এম রহমান এবং তার পরিবারের সমালোচনা করে একটি প্রতিবাদী ভূমিকা নিলেও আবু করিম হিরো হতে পারবেন না। আমাদের সময় পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হওয়ার ৭২ ঘনটার মধ্যেই প্রতিবাদী আবু করিম হয়ে যান ক্ষমাপ্রার্থী। দৈনিক জনকন্ঠ-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন: ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারির বই মেলায় সূচীপত্র প্রকাশনী থেকে বাগানে ফুটে আছে অশংখ্য গোলাপ শিরো নামে আমার একটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যাতে আলুবোখরা ও আবদুররহমান শীর্ষক একটি কবিতা ছাপা হয়েছে যা ৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এ লিখিত হয়েছে মর্মে কবিতাটির শেষে উল্লেখ আছে। এতে আমি জাতির জনক বংঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমান বা তার পরিবারকে কটাক্ষ করে কিছু লিখিনি। এটি একটি রুপক আশ্রয়ী কবিতা। তবুও আমার কবিতাটি যদি কারও মনে আঘাত দিয়ে থাকে এ জন্য আমি নি:শর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও দু:খ প্রকাশ করছি। দেখা যাচ্ছে আবু করিম তার প্রতিবাদ শক্তি হারিয়েছেন এবং তার কবিতাটির গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে। অথবা বলা যায়, আবু করিমই নিজের মানহানি করেছেন। সে যা-ই হোক। এল রহমান বা লতিফুর রহমান যদি এস এম রহমান কিংবা শেখ মুজিবুর রহমান হন এবং এ রহমান অথবা আব্দুর রহমান যদি জেড রহমান বা জিয়াউর রহমান হন তাহলে এটাও নিশ্চয়ই আপনি বুঝে গিয়েছেন মিসেস কে রহমান হচ্ছেন জেড রহমানের স্ত্রী খালেদা রহমান ওরফে খালেদা জিয়া। কে রহমান (ওরফে খালেদা রহমান ওরফে খালেদা জিয়া)-ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কারন ছাড়া ওই সময় তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়ে খুবই আলোচিত ছিলেন। তাকে নিয়ে জল্পনা কল্পনা হচ্ছিল একুশের প্রথম প্রহরে যখন শহীদ মিনারে যাবেন, তখন তাকে যথাযথ প্রটোকল দেয়া হবে কি? রাষ্ট্রায়ত্ব বিটিভি তাকে আদৌ টিভিতে দেখাবে কি? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর ওই রাতেই পাওয়া যায়। তাকে যথাযথ প্রটোকল দেয়া হইনি এবং টিভির পর্দায় তাকে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখানো হয়। তত্ত্বাধায়ক সরকারের আমলে নভেম্বর ২০০৮-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে খালেদা জিয়া এসএসএফ (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স)-এর যে ব্যাপক ও গভীর নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন তা আওয়ামীলীগ সরকার তুলে নেয় ফেব্রুয়ারী ২০০৯-এর প্রথম সপ্তাহে। খালেদা জিয়ার জন্য এসএসএফ পরিচালিত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ব্যাবস্থা পূনর্বহালের দাবি জানান বিএনপির নেতা কর্মীরা। তাদের এ দাবি সোচ্চার হওয়ার সময়ই ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে জানা গেল দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর মধ্যেই বিরাজ করছে চরম নিরপত্তাহীনতা। পরিনতিতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ইস্যুটি পেছেনে পড়ে যায়। তবুও বলার অপেক্ষা রাখেনা ২৫ ফেব্রুয়ারি বা টু/টোয়েন্টিফাইভ (2/25)-পরবর্তী অবস্থায় মিসেস কে রহমানের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্ব সরকারেরই। ওই ফেব্রুয়ারি মাসেই বাংলদেশে রহম্যানিয়ার আরেক উৎস ছিলেন এম (মাহমুদুর রহমান)। তার কারণ এই সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও বর্তমানে কলাম লেখক মাহমুদুর রহমানের সাংবাদিকতা বটে! শীর্ষক রচনাটিতে জানা যায় দৈনিক আমার দেশে ২৩ ফেব্রুয়ারিতে। এখন পড়ুন ওই লেখাটির বিশেষ কিছু অংশ: দিন দশেকের জন্য ব্যক্তিগত ব্যাবসার কাজে জার্মানিতে যেতে হয়েছিল। ফিরেছি গত বৃহস্পতিবার। যেসব পাঠক-পাঠিকা কষ্ট করে আমার লেখা নিয়মিত পড়ে থাকেন তাদের হয়ত স্মরনে রয়েছে জরুরি সরকারের তোঘলকি প্রশাসন তাদের দুই বছরব্যাপি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী স্বেচ্চাচারিতার সময়কালে আমার প্রতিবার বিদেশ যাত্রার সময় জিয়া বিমানবন্দরে নানান রকম নাটকীয় ঘটনার সৃষ্টি করতেন। ২৯ ডিসেম্ব ২০০৮ অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট অস্বাভাবিক বিজয় লাভ করার পর সপ্তাহখানেক ধরে দেশের বেশ কিছু পত্র-পত্রিকায় শদুয়েক ব্যক্তির এক তালিকা প্রকাশ করে প্রচার করা হচ্ছিল যে, তালিকাভুক্তদের বহির্বিশ্বে ভ্রমণের ওপর নাকি সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আশ্চার্যকজনকভাবে সেই তালিকায় আমার মতো নিতান্তই একজন অকিঞ্চিৎকর ব্যক্তির নামও সংযুক্ত থাকার কথা পত্রিকা মারফতই জেনেছিলাম। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় তো এমনও লেখা হয়েছিল যে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে আমার ওপর ভয়ানক ক্ষুদ্ধ। আমার এই অপার সৌভাগ্যে আমি শিহরিত হয়েছিলাম। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরাগভাজন হওয়ার দুর্লভ সুযোগ কজনের ভাগ্যেই বা জোটে? নির্বাচিত সরকারের কাজকারবার যখন স্বৈরাচারী, আধা সামরিক জামানাকে স্মরন করিয়ে দেয় তখন যে কোনো গণতন্ত্র মনস্ক নাগরিকের কর্তব্যই হলো তার প্রতিবাদ করা। প্রতিবাদের নানান রকম ভাষা এবং হাতিয়ার থাকে। আমি একটি মাত্র অস্ত্রই ব্যবহার করতে শিখেছি এবং পাঠক বুঝতেই পারছেন সেই অস্ত্রটি হলো হাতের কলম। ক্ষমতাসীন সরকারের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপকে উপজীব্য করে �ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করতে নৈতিক বল চাই� এবং ‘জরুরি আইনের ভুত নির্বাচিত সরকারের ঘাড়ে’ শিরোনামে দুটি মন্তব্য প্রতিবেদন এই আমার দেশ পত্রিকায় লিখেছিলাম। এর মধ্যে তথাকথিত ভিআইপিদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে নানান রকম পরস্পর বিরোধী সংবাদ বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। শেষ পযর্ন্ত সরকারি আদতে এই প্রকার কোনো তালিকার অস্তিত্বই নেই। অন্যদিকে বেশ কজন সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীকে জিয়া বিমানবন্দর থেকে উপরের নির্দেশের কথা বলে ঠিকই ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনই এক রহস্যময় পরিস্থিতিতে ৯ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে গিয়ে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের চমৎকার, সৌজন্যমূলক ব্যবহারে আনন্দিত হওয়ার পাশাপাশি বিস্মিতও হয়েছি। বিমানবন্দরের সুব্যবস্থাপনায় আশাবাদী হয়ে ভাবলাম সরকারের তাহলে সংবিৎ ফিরতে শুরু করেছে। ১০ দিন পর দেশে ফিরে দেখছি ক্ষমতাবানদের সংবিৎ এখনো যাওয়া-আসার মধ্যেই রয়েছে। অবস্থা অনেকটা আইসিইউতে(ICU)-তে রাখা রোগির মতো। তার ওপর বাংলাদেশের এক শ্রেণীর সংবাদ মাধ্যম রহস্যজনক কারণে যেন চাচ্ছেই না সরকারের আদৌ সংবিৎ ফিরুক। ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার দৈনিক সমকাল পত্রিকায় ‘৬২ ভিআইপির দেশত্যাগ নিষেধ’ শিরোনামে প্রধান সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা মাথায় নিয়ে বিদেশ ভ্রমণরত ভিআইপিদের তালিকায় দেখলাম আমার নামও রয়েছে। আমার বিদেশ যাত্রা নিয়ে সমকালের সাংবাদিকের উর্বর মস্তিস্কজাত সংবাদটি নিম্নরুপ: এদিকে তালিকায় নাম থকালেও গত ১২ ফেব্রুয়ারি সপরিবারে বিদেশ গেছেন সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান। তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে ইমিগ্রেশন পুলিশও কিছু জানে না। কিভাবে তিনি গেলেন তাও বলতে পারছেন না কেউ। অন্য মন্তব্যে যাওয়ার আগে সমকালে প্রদত্ত তথ্যের বিশ্বস্ততার পরীক্ষা নেয়া যাক। আমি বিদেশে গিয়েছি ৯ফেব্রুয়ারি রাত ৯টা ১০ মিনিটের এমিরেট এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৫ নং ফ্লাইটে। যাওয়ার উদ্দেশ্য জার্মানির ফ্রাংফুর্টে আয়োজিত বিশ্বের বৃহত্তম সিরামিক তৈজসপত্রের মেলায় অংশগ্রহন। সমকাল পত্রিকা কর্তৃপক্ষ হয়তো মনে ব্যাথা পাবেন। কিন্তু দেশবাসি জেনে নিশ্চয়ই গর্ববোধ করবেন যে, বিশ্বখ্যাত এই মেলায় এবার সেরা ১০টি ডিজাইনের একটি নির্বাচিত হয়েছে আমার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আর্টিজান সিরমিকের আলট্রা বোন সিরিজের বিশেষ ডিনারসেটের রেঞ্জটি। আমাদের শ্রমিকরা এতোটা দক্ষতার পারিচয় দিচ্ছেন ভাবতেও তো গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। ১০ দিনের জার্মানি সফরে আমার সঙ্গে আর্টিজান সিরামিকের তিন কর্মকর্তা সফরসঙ্গী ছিলেন। সমকাল বলেছে, আমি নাকি সপরিবারে বিদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার সহকর্মীদের যদি উল্লিখিত পত্রিকটির সাংবাদিক প্রবর আমার পরিবারভুক্ত বিবেচনা করে থকেন। তাহলে আমি আনন্দিতই হবো। অবশ্যই আমার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সদস্যকে আমি পরিবারের সদস্যই মনে করি এবং তাদর কাছেও আামি অভিভাবকতুল্য। তবে সামাজিকভাবে আমাদের দেশে পরিবারের যে সংজ্ঞা সেই অনুযায়ী আমার মা এবং স্ত্রী দুজনই দেশে ছিলেন। আমার সঙ্গে জার্মানি যাওয়ার ফুরসত তাদের হয়নি। খবরে আমার বিরুদ্ধে দুদকের চলমান মামলা প্রসঙ্গেও উল্লেখ করা হয়েছে। আমার ধারনা, বাংলাদেশের সচেতন জনগণের অধিকাংশই এই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সর্বৈব মিথ্যা মামলাটি সম্পর্কে এতো দিনে জেনে গেছেন। তারপরও সংবাদে প্রসঙ্গ যেহেতু উত্থাপন করা হয়েছে কাজেই পুরনো লেখার পুনরুক্তির আশঙ্কা সত্ত্বেও এই বিষেয়ে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি লাইন লেখা আবশ্যক। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠিভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণ বিষয়ক। ওই প্রতিষ্ঠানে এক যুগ আগে আমি কর্মরত ছিলাম। প্রতিষ্ঠারেন মালিক পক্ষ উচ্চ আদালতে হলফনামা দাখিল করে ঋণটিকে কোম্পানির দায় হিসেবে স্বীকার করেছে এবং মামলাটিকে হয়রানিমূলক বর্ণনা করেছে। উচ্চ আদালত মামলাটি কেন খারিজ করা হবে না সেই মর্মে দুদক এবং সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। বাংলাদেশের সব মহলই অবগত আছেন যে, আমার পাচ বছরের সরকারি দায়্ত্বি পালনকালে কোন একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিচ্যুতির অভিযোগও দুই বছরের চরম নির্যাতনকারী আধা সামরিক সরকার উত্থাপন করতে সক্ষম হয়নি। মামলার প্রসঙ্গযখন উঠলোই তখন বর্তমান ক্ষমতাসীনদের দিকে একবার নজর দেয়া যাক। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী কমপক্ষে অর্ধডজন মামলার অভিযুক্ত আসামী। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জালানি মন্ত্রনালয় বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক এলাহী চৌধুরি নাইকো মামলায় কারাভোগ করে বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন এবং স্থানীয় সরকার প্র্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক গত জরুরি সরকারের প্রনীত কথিত শীর্ষ দুর্নিতিবাজদের প্রথম তালিকার ১৬ নাম্বারে রয়েছেন। দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের যে দ্বীতিয় তালিকা গত সরকার জনসমক্ষে প্রচার করেছিল তার মধ্যে সাকো শিল্পগোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এবং বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের অবস্থান ছিল ২১ নাম্বারে। সমকালের সাংবাদিক মহোদয় কি বলতে চাচ্ছেন যে, মামলা থাকার কারনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বাকি তিনজন মন্ত্রী বিদেশ ভ্রমন করতে পারবেন না? অনেক পাঠকই হয়তো অবগত আছেন যে, সমকাল পত্রিকাটির মালিক হচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা এবং হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ। যে তথ্যটি পাঠকদের স্মরণে নাও থাকতে পারে, ২২২ শীর্ষ দুর্নিতিবাজের দ্বিতীয় তালিকায় ৮ নাম্বারের জনাব এ কে আজাদ এবং সমকালের মালিক একই ব্যাক্তি। সমকাল পত্রিকায় কর্মরত যে সাংবাদিকটি সবার অগোচরে আমার সপরিবারে বিদেশে চলে যাওয়ার কষ্টকল্পিত গল্পটি রচনা করেছেন তিনি তার পত্রিকার মালিক সম্পর্কে সম্ভবত একেবারেই খোজ খবর রাখেন না। আমি যতো দূর জানি, জনাব আজাদ বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে স্বল্প সময়ের মধ্যে তার বিপুল অর্থবিত্ত অর্জন করেছেন। এই শ্রেণীর ব্যক্তিরা নিজে কাচের ঘরে বসবাস করে অন্যের ওপর খামোখা ঢিল ছোড়ার মতো নির্বুদ্ধিতা দেখাবেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সম্পাদক মহোদয়ের অধিকতর সাবধানী আচরণ করা উচিত । না হলে পত্রিকার বিশ্বাসযোগ্যতা তো নষ্ট হয়ই, তার সংঙ্গে মালিকপক্ষকেও অপ্রস্তুত হতে হয়। আলোচ্য সংবাদে দেখা যাচ্ছে, আমার বিদেশ যাত্রার তারিখ ভুল, সপরিবারে নীরবে চলে যাওয়ার খবর মিথ্যা এবং ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে বিমানে ওঠার কাহিনী অবাস্তব। এই পত্রিকা এবং সাংবাদিকের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত সেটি নির্ধারন করার দায়িত্ত্ব পাঠকের ওপরই ছেড়ে দিলাম। বাস্তবতা হল, সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার মান দন্ডে বাংলাদেশে বর্তমান বড়ই দুরবস্থা বিরাজমান। অনেকেই হয়ত তর্ক তুলবেন, সমাজের সব ক্ষেত্রকেই যখন অবক্ষয় গ্রাস করেছে তখন আর সংবাদ মাধ্যমের জন্য এই হা-হুতাশ কেন? মুশকিল হল সংবাদ মাধ্যম কিংবা সাংবাদিকতাকে সমাজের আর দশটি ক্ষেত্রের মত করে বিচার করলে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, ইনসাফ এসবের কোন স্থান রাষ্ট্র বা সমাজে আর থাকেনা। যে কোন সভ্য দেশে সাংবাদিকতার ভিন্ন একটি মর্যাদা রয়েছে। ফোর্থ এস্টেট(Fourth Estate) বলে সংবাদ কর্মীদের এত যে গরিমা তার একটা বুনিয়াদ তো থাকতে হবে... ... দেশের বহুল প্রচারিত অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ একটু মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলেই প্রতিযোগি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব এবং স্বার্থের সংঘাতের স্বরুপটি পাঠকের কাছে ধরা পড়বে। মালিকের স্বার্থ রক্ষার নামে সাংবাদিকরা নীতিভ্রষ্ট হয়ে অপসাংবাদিকতার আশ্রয় নিচ্ছেন। সাংবাদিকতার সব নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে চোখ বুজে মালিক পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার ফলেই সংবাদ পত্র তার লড়াকু, স্বাধীন চরিত্র বিসর্জন দিয়ে কেবল একটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচারণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। পুজির সঙ্গে নীতিহীন সাংবাদিকতার অশুভ আতাত নিয়েই পশ্চিমের বর্তমান সময়ের সবচেয়ে প্রতিবাদী লেখক নোয়াম চমস্কি তার Propaganda model নির্মাণ করেছেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সচেতন নাগরিক এখন সঙ্গত কারনেই ফোর্থ এস্টেটকে ফিফথ কলামিস্ট নামে অভিহিত করতে বাধ্য হচ্ছে। রাষ্ট্র এবং জাতির স্বার্থেই এই পঙ্কিলতা থেকে উদ্ধার পাওয়া জরুরি। আমি বিশ্বাস করি, এখনো নীতিনিষ্ঠ প্রবীণ সাংবাদিকরা যদি এ ধরনের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাহলে নবীনদের আলোর পথে প্রত্যাবর্তন করানো সম্ভব। কিছু পেশাকে অন্তত মুক্তবাজারের বীভৎস আক্রমন থেকে রক্ষা করে আদর্শের ভিত্তিতে দাড় করাতে না পারলে আমাদের জন্য চরম দুঃসময় অপেক্ষা করছে। একটি স্বাধীন দেশে কথা বলার অধিকার বাচিয়ে রাখতে হলে অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধ আসতে হবে আদর্শবাদী সাংবাদিকদের মধ্য থেকেই। আমি জানি আপনার পিতার নাম ছিল সাইদুর রহমান যিনি ছিলেন একজন মানববাদী বা হিউম্যানিস্ট। তিনি নিজেকে রহমানের পরিবর্তে ম্যান পরিচয় দিতে উৎসাহী ছিলেন। RAHMAN-এর প্রথম তিনটি অক্ষর কেটে শুধু MAN বলতেন নিজেকে। নিজের ধর্ম বিষয়েও তিনি MUSALMAN-এর প্রথম পাচটি অক্ষর কেটে MAN বলতেন। আপনি দুরদর্শী বলেই হয়তো ১৯৬৫-তে নিজের নাম RAHMAN-কে REHMAN (রেহমান) করেন। তখন কে জানতো বাংলাদেশ এতো সেলিব্রিটি রহমানের আবির্ভাব ঘটবে? শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে জিয়াউর রহমান, খালেদা রহমান, তারেক রহমারন, সাইফুর রহমান, বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, বিচারপতি লতিফুর রহমান, সবশেষে জিল্লুর রহমান প্রমুখ? তাদের ভিড়ে মিশে না গেলেও আপনি মাহমুদুর রহমান সমস্যায় পড়ে যেতে পারেন। ৯ মার্চের মানবজমিনে ‘দেশ ছাড়তে পারবেন না যারা’ শীর্ষক সংবাদে যে ৮৫ ব্যক্তির লিষ্ট বেরিয়েছে তাতে আপনার নামও দেখলাম। ঢাকা এয়ারপোর্টে আপনি বহুবার বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। সুতরাং ব্যবসায়িক বা চিকিৎসা কিংবা যে কোনো ব্যক্তিগত কারনে বিদেশ যাবার আগে এই লিস্টের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যাবেন এবং প্রয়োজনে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করবেন। অন্যদিকে সরকারের উচিত হবে এই বিষয়ে একটি নির্ভরযোগ্য সরকারি নোটিশ জারি করে সব অস্পষ্টতা দূর করা। নাম বদলের বিষয়টি কৌতূহল উদ্দীপক হয় যদি তা করেন কোনো সেলিব্রিটি। বৃটিশ-ইন্ডিয়ায় মুসলিম বাঙালি সুগায়ক তালাত মাহমুদ নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন তপন কুমার । সেই নামেই তার বিখ্যাত গান ‘দুটি পাখি দুটি তীরে, মাঝে নদী বহে ধীরে বাজারজাত হয়’। একই সময়ে পাঠান বংশোদ্ভুত মুসলিম অভিনেতা ইউসুফ খান নিজের নাম পরিবর্তন করে রেখেছিলেন দিলীপ কুমার। রতন, জুগনু, আন্দাজ, শবনম, আন, গঙ্গা-যমুনা, নয়া দৌড়, তারানা, ফুটপাথ, দেবদাস, মধুমতী, মুঘল-এ-আজম প্রভৃতি হিট মুভির নায়ক দিলীপ কুমার ছিলেনপঞ্চাশের দশকে ওষাটের দশকের শুরুতে এই উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা। সম্ভবত এ কারণেই ৬ জানুয়ারি ১৯৬৭-তে মাদ্রাজে সঙ্গীতজ্ঞ আর কে শেখরের দ্বিতীয় সন্তানের জম্ম যখন হয় তিনি তখন তার নাম রাখেন এ এস দিলীপ কুমার (A S Dileep Kumar)। আর কে শেখর তখন মালয়ালম মুভিতে সুরকার রুপে কাজ করছিলেন। তার ছোট ছেলে দিলীপকে সঙ্গে নিয়ে মুভি স্টুডিওতে যেতেন। দিলীপের বয়স যখন মাত্র চার তখন তাকে দক্ষভাবে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখে অবাক হয়ে যান সঙ্গীত পরিচালক সুদর্শনম মাস্টার। তিনি কাপড় দিয়ে সেই হারমোনিয়ামের রিড (কিবোর্ড) ঢেকে দিলেও দিলীপ একইভাবে বাজিয়ে যান। সুদর্শনম মাস্টারের উপদেশে শেখর চার বছর বয়স থেকেই দিলীপকে মিউজিকে ট্রেইনিং দেয়ার ব্যবস্থা করেন। ধনরাজ মাস্টার হন তার টিচার। দিলীপ শেখঅ শুরু করেন পিয়ানো বাজানো। সেই সময় বড় হয়ে দিলীপ হতে চেয়েছিলেন ইলেকট্রনিক্স অথবা কমপিউটার ইঞ্জিনিয়ার। এ আর রহমান তার স্মৃতিচারনে বলেন, মিউজিকের অন্য ততোটা ক্রেইজি ছিলাম না যতোটা ছিলাম টেকনলজির প্রতি। ঘটনাচক্রে মিউজিক ও টেকনলজি, উভয়ের সম্মিলিন হয় শেখরের সিনথেসাইজেরর মাধ্যমে । শেখর গিয়েছিলেন তার কাজে সিংগাপুরে। ফেরার সময় তিনি এনেছিলেন একটি সিনথেসাইজার। সেই সময় মিউজিক ও মুভি ওয়ার্ল্ডে সিনথেসাইজার ছিল অতি দুর্লভ একটি বাদ্যযন্ত্র। শিশু দিলীপ এই যন্ত্রে গভীর ভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা সিনথেসাইজার নিয়ে বহু রকমের মিউজিকাল এক্সপেরিমেন্ট করতে থাকেন। দিলীপের ছেলেবেলা ছিল খুব অভাব ও কষ্টের। একটি রহস্যময় রোগে মাত্র নয় বছর বয়সে তার পিতা মারা যায়। ওই সময় ইশ্বরের প্রতি দিলীপের ধারনা বদলাতে থাকে। পিতার চিকিৎসার জন্য টাকার অভাব, তার যন্ত্রণা, পরিচিত মানুষের তীব্র উদাসীনতা এবং সামগ্রিক ভাবে সমাজের উপেক্ষা দিলীপকে খুব কষ্ট দেয়। আরো কষ্ট দেয়, বিশেষত তার পিতার মৃত্যুর দিনটি। ওই দিনেই তার পিতার সুর আরোপিত প্রথম মুভিটি রিলিজ হলেও তা তিনি দেখে যেতে পারেননি। এগুলো এতই বেদনাদায়ক ছিল যে আজো এ আর রহমান এ নিয়ে কিছু বলতে চাননা। পিতার শেখর পেছনে রেখে যান তার স্ত্রী কস্তুরী (এখন করিমা বেগম) এবং তিন কন্যা ও এক পুত্র কাঞ্চনা (দিলীপের বড়) এবং বালা (এখন তালাত) ও ইশরাত। এই তিন বোন ও মায়ের সংসার চালানোর সব দায়িত্ব এসে পড়ে বালক দিলীপের ওপর। এগারো বছর বয়সে তিনি ইলিয়ারাজা সঙ্গীত দলে যোগ দেন কিবোর্ড প্লেয়ার রুপে। ইতিমধ্যে তিনি গিটার বাজানো শেখেন। এভাবে এ আর রহমান চুড়ান্ত ভাবে মিউজিক ওয়ার্ল্ডে ঢোকেন। তাকে সব রকমের অনুপ্রেরনা ও সাহায্য দেন তার মা যিনি চেয়েছিলেন প্রয়াত স্বামীর পদাঙ্ক যেন ছেলে অনুসরণ করে। গানের ভুবনে ঢোকার ফলে দিলীপের আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তিনি খুব নাম করা দুটি শিক্ষায়তন পদ্ম শেষাদ্রি বাল ভবন এবং মাদ্রাজ ক্রিশ্চিয়ান কলেজ-এ পড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তবুও এমভি বিশ্বনাথন, রাজকোটি, রমেশ নাইডু-র অর্কেস্ট্রায় কর্মরত থাকেন। এই অর্কেস্ট্রার সঙ্গে তিনি বিশ্ব ভ্রমনে যান এবং জাকির হোসেন ও কুন্নাকুডি বিদ্যানাথন-এর সঙ্গে বাজনায় অংশ নেন। তার প্রতিভায় অনেকে আকৃষ্ট হন এবং তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ট্রিনিটি কলেজ অফ মিউজিক-এ পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দেন। এখানে ওয়েস্টার্ন ক্ল্যাসিকাল মিউজিকে একটি ডিগ্রি আয়ত্ব করার পর তিনি ইন্ডিয়ায় ফিরে আসেন। তখন তার স্বপ্ন পশ্চিমের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সঙ্গে আধুনিক ইন্ডিয়ান সুরের সম্মিলন ঘটানো। স্বদেশে ফিরে এসে তিনি প্রায় নয় বছর বিভিন্ন সঙ্গীত পরিচালকের সাথে কাজ করেন। কিন্তু একই ধরনের গানে দিলীপ খুব একঘেয়ে বোধ করতে থাকেন। তার সৃজনী প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ তিনি পাননা। এসময় ইলিয়ারাজা সঙ্গীত দলের লিড কিবোর্ড প্লেয়ার ভিজি ম্যেনুয়াল তাকে উপদেশ দেন অন্য কোন ধরনের কাজ করতে। দিলীপ তখন অ্যাডভার্টাইজিং ফার্মে যোগ দেন এবং জিংগল (বিজ্ঞাপনী স্লোগান) লেখা এবং এতে সুর দেয়ায় মনোনিবেশ করেন। প্রায় পাঁচ বছর তিনি বিজ্ঞাপনী ব্যবসায় কাজ করেন। ওই সময় তিনি ইসলামি আধ্যাত্মিক গানের দিকে ঝোকা শুরু করেন। তার প্রথর পূর্নাঙ্গ যে মিউজিক এ্যালবামটি তিনি প্রকাশ করেন এর নাম ছিল দিন ইসাই মালাই(Deen isai malai)। ইসলামী আধ্যাত্মীক গানের এই সংকলনটি ছিল তামিল ভাষায়।দিলীপ কখন এ আর রহমান হলেন? কেন তিনি হিন্দু ধর্ম ছেড়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করলেন? ওই এ্যালবাম প্রকাশের সময় ১৯৮৮-তে অর্থাৎ দিলীপের বয়ষ যখন একুশ তখন তার এক বোনের গুরুতর অসুখ হয়। কোনো চিকিৎসাতে কাজ হচ্ছিল না। সবাই যখণ হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন তখন পরিবারের এক বন্ধুর উপদেশে তারা যান শেখ আব্দুল কাদির জিলানির নামে মুসলিম পীরের কাছে। তিনি পীর কাদরি নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন। পিতার রোগের সময় ওই একই পীরের কাছে দিলীপ পরিবার গিয়েছিলেন। কিন্তু তখন পিতার অন্তীম সময় বলে পীর কিছু করতে পারেননি। এবার বোনের অসুখের সময়ে তারা দেরি করেননা । দিলীপ পরিবার যান পীর কাদরির কাছে। তার দোয়ায় অতি আশ্চার্য জনক ভাবে দিলীপের বোন দ্রুত সেরে ওঠেন। পিতা ও বোনের অসুখের সময় সমাজের অবহেলা এবং তার বিপরিতে পীরের সদুপদেশ ও সাহায্য গভীর ভাবে প্রভাবিত করে তরুন দিলীপকে ধর্মান্তরিত হতে। তিনি ও তার গোটা পরিবার ইসলাম ধর্ম বরণ করেন। দিলীপ হয়ে যান এ আর রহমান। এখন এ আর রহমান বলেন, ইসলাম আমাকে শান্তি দিয়েছে। দিলীপ রুপে আমি একটা হীনম্মন্যতায় ভুগতাম। এ আর রহমান হয়ে আমার মনে হয় পুনর্জন্ম লাভা করেছি। দিলীপের মা জ্যোতিষবিদ্যায় বিশ্বাসি ছিলেন। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তিনি তার ছেলেকে নিয়ে যান এক জ্যোতিষীর কাছে। এবং অনুরোধ করেন একটি শুভ মুসলিম নাম দিতে। দিলীপকে দেখে ওই জ্যোতিষী তাৎক্ষনিক ভাবে তার নাম আব্দুর রহমান এবং সংক্ষেপে এআর রহমান রাখতে উপদেশ দেন। দিলীপের মা এতে অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন, আব্দুল রহমানের সংক্ষেপিত নাম তো এ রহমান হওয়া উচিত । এ আর রহমান হবে কি করে? জ্যোতিষী উত্তর দেন, তার নাম আব্দুল হলেও রহমানের আগে দুটি আদ্যক্ষর রাখলে সে বিখ্যাত হবে। তাই শুধু (A) নয়, এ আর (A R)-ই রাখতে হবে। কস্তুরি ওরফে করিমা বেগম ঠিক তা-ই করেন দিলীপের নাম রাখেন এ আর রহমান। পরে ইন্ডিয়ার তদানীন্তন টপ সুরকার নওশাদ আলী যিনি পশ্চিমি সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তার সংস্পর্শে যখন এ আর রহমান আসেন তখন তিনি উপদেশ দেন আব্দুলটা বদলে ফেলে বিখ্যাত তবলা বাদক আল্লা রাখা(Allah rakha)-র নামে এ আর রাখতে। এ ভাবেই এএস দিলীপ কুমার থেকে ওরফে আব্দুল রহমান ওরফে আল্লা রাখা রহমান ওরফে এ আর রহমান-এর পর্যায়ক্রমিক নামান্তর ঘটে। তারই কল্যাণে রহমান নামটি এখন বিশ্ব জুড়ে সুপরিচিত হয়েছে। হরম্যানিয়া চলছে। গত ফেব্রুয়ারিতে একই রাতে দুটি অস্কার পুরুস্কার পেয়ে এ আর রহমান বিশ্ব জুরে তার ভক্তদের গর্বিত করেছেন,তার পরিবারকে সুখী করেছেন, বলিউডকে সম্মানিত করেছেন এবং হলিউড-কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছেন। হলিউডের মুভি ইনডাস্ট্রিতে সুরকার ও আবহ সঙ্গীত পরিচালক রুপে এতদিন আমেরিকানদেরই আধিপত্য ছিল। হেনরি মানচিনি, এলমার বার্নস্টাইন, জন উইলিয়ামস প্রমুখ। এখন হলিউড চাইবে এ আর রহমানকে। এসব সাফল্যের জন্য এ আর রহমান সব কৃতিত্ব দেন ঈশ্বরকে। তিনি বলেন, আমার মা আল্লাহর কাছে যেসব প্রার্থনা করেছেন তারই ফসল আমি। আমি যা তার কারণ হলো, প্রতিদিন সচেতন ও আন্তরিকভাবে পাচবার নামাজ পড়ি। আল্লাহ যা চায় আমি তা-ই হবো। আমি তা জানি। সে আমাকে সবই দিয়েছে। সে আবার সবকিছু নিয়েও নিতে পারেন। তাই যদি সে করে তাহলে কোন প্রশ্ন করবোনা, কনো আপত্তি করবোনা। তার সিদ্ধান্ত আমি মেনে নেবো। আল্লাহই আমার সবকিছু। তার বিশাল সৃষ্টিযজ্ঞের একটি ছোট অংশ আমি। সে আমাকে সৃষ্টি করেছে একটি বিশেষ মিশনের জন্য। সেই মিশনটা অর্জন না করলে আমি পাপ করবো। এটাই আমার একমাত্র বিশ্বাস। আমার কাছে এটাই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের কোনো প্রলোভনই আমাকে নোয়াতে পারবেনা। আমার জন্ম হয়েছে মিউজিকের জন্য। আমি মিউজিকের জন্যই বেচে আছি এবং শেষ পর্যন্ত মিউজিকের জন্যই বেচে থাকবো। এটাই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু এটুকুই জানি। বাংলাদেশে জিল্লুর রহম্যানিয়া আদৌ সৃষ্টি হবে কি না এবং হলেও কতো দিন টিকবে তা বলতে পারি না। কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি এ আর রহম্যানিয়া বিশ্ব জুড়ে দীর্ঘদিন চলবে। ইন্টারভিাউ নিয়েছেন শফিক রেহমান ১০ মার্চ ২০০৯ mouchakaydheel@yahoo.com (সুত্র, মৌচাকে ঢিল)
Inscription à :
Publier les commentaires (Atom)
Aucun commentaire:
Enregistrer un commentaire