বাংলাদেশ ভাঙলো কারা?
শফিক রেহমান
গত ৩ অক্টোবর ২০০৭-এ আমি একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। সেখানে প্রথমেই আমি নিজের পরিচয় দিয়েছিলাম। নতুন পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি পরিচয়টা আবার দিচ্ছি। আমি বাংলাদেশের একটি নেড়ি কুত্তা। আমার অবস্থান এতোই নিচে যে, আমাকে কুকুরও বলা হয় না। বলা হয় কুত্তা। আর নাম? আমার কোনো নাম নেই। বলা হয় নেড়ি। খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে আমার গায়ের অনেক লোম ঝরে গিয়েছে। আমাকে ন্যাড়া দেখায়। তাই বোধহয় আমার নাম নেড়ি। ওই ইন্টারভিউতে আমি জানিয়েছিলাম আমেরিকায় ট্রাবল (Trouble বা ঝামেলা) নামে একটি মলটিজ (Maltese) জাতীয় শাদা কুকুরকে তার পালক মিজ লিওনা হেমসলি ১২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৪ কোটি টাকা) তার উইলে দিয়ে গিয়েছেন। পরলোকগত মিজ হেমসলি ছিলেন একজন বিত্তশালী হোটেল মালিক। তার মৃত্যুর পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী কুকুর হয়েছে ট্রাবল। ওই ইন্টারভিউ ছাপা হওয়ার পর থেকে অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, এ মিলিয়নেয়ার কুকুরটির কি হলো? সে কেমন আছে? এবং আরো অনেক ধরনের প্রশ্নই আমাকে পাঠকরা করেছেন। সংড়্গেপে উত্তরটা হলো ট্রাবল এখন বেশ ট্রাবলে আছে। জীবিত অবস্থায় মিলিয়নেয়ার হোটেলিয়ার মিজ হেমসলি ছিলেন হাড় কিপটে। নিউ ইয়র্কের হাই সোসাইটিতে তাকে বলা হতো কুইন অফ মিন (Queen of Mean বা হাড় কিপটের রানী)। এ রকম লেজেন্ডারি এক কৃপণের মৃত্যুর পর তার পালিত কুকুর ১২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে জেনে নিউ ইয়র্কের হাই সোসাইটি স্তম্ভিত হয়েছে। মিজ হেমসলির এ অসাধারণ, বিরাট ও পাশবিক দানকে তারা মেনে নিতে পারছে না। পত্রপত্রিকাগুলো ছন্দ করে ট্রাবলের নতুন নাম দিয়েছে রিচ বিচ (Rich Bitch বা ধনী মাদি কুকুর)। ট্রাবল যে শুধু নিউ ইয়র্ক হাই সোসাইটি এবং মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা নয়, আরো বেশি দূরভিসন্ধিমূলক গোষ্ঠীর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। এরা হলো বস্ন্যাকমেইলার এবং কিডন্যাপার। এরা ট্রাবলকে অসংখ্য হুমকি দিয়েছে। ট্রাবলের পালন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত টিম বাধ্য হয়ে ট্রাবলের নাম ও পরিচয় বদলে ফেলেছেন। তারা নতুন নাম ও পরিচয়ে একটি প্রাইভেট জেট পেস্ননে ট্রাবলকে নিয়ে গিয়েছেন অজ্ঞাত এক স্থানে। ট্রাবলকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ওয়াকিফহাল মহল মনে করেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গার্ড দিয়ে ফ্লোরিডার কোথাও রাখা হয়েছে তাকে। গোটা আমেরিকা এখন লড়্গ্য রাখছে ট্রাবলের কি হয়। মিজ হেমসলির এক সাবেক স্টাফ জন কোডি জানিয়েছেন, আমরা দৈনিক ২০ থেকে ৩০টা হুমকি পাচ্ছিলাম। এতে সবাই বিপন্ন বোধ করি। সিবিএস টেলিভিশনের আর্লি শো (Early Show) অনুষ্ঠানে জন কোডি বলেন, বস্ন্যাকমেইলাররা হুমকি দেয়, আই অ্যাম গনা কিল দি ডগ। আই অ্যাম গনা কিডন্যাপ দি ডগ। আই নিড দি টুয়েলভ মিলিয়ন ডলার (I'm gonna kill the dog. I'm gonna kidnap the dog. I need the $ 12 million� আমি কুকুরটাকে খুন করবো। আমি কুকুরটাকে কিডন্যাপ করবো। আমার সেই ১২ মিলিয়ন ডলার দরকার)। মিজ হেমসলি ছিলেন একটি হোটেল চেইন এবং বহু প্রেস্টিজিয়াস প্রপার্টির মালিক। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মালিক কম্পানির শেয়ারহোল্ডার ছিলেন তিনি। আগস্ট ২০০৭-এ মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৭। তার বিলিয়নেয়ার স্বামী হ্যারি মারা গিয়েছিলেন ১০ বছর আগে ১৯৯৭-এ। তার পরই জন কোডি মিজ হেমসলিকে দিয়েছিলেন ট্রাবল। আগেই বলেছি, মিজ হেমসলির নাম হয়েছিল কুইন অফ মিন। ট্যাক্স ফাকি দেয়ার অভিযোগে তার বিরম্নদ্ধে মামলা হয়েছিল। মামলা চলার সময়ে তিনি মন্ত�ব্য করেছিলেন, ওনলি দি লিটল পিপল পে ট্যাক্সেস (Only the little people pay taxes- শুধু ছোটলোকরাই ট্যাক্স দেয়)। তার এ কথার পর মিডিয়া তাকে কুইন অফ মিন টাইটেল দেয়। মিজ হেমসলির কর্মচারীরা এতে খুব ড়্গুব্ধ হয়েছেন। তারা বলেন, ওই টাইটেলের পরিবর্তে মিজ হেমসলির টাইটেল হওয়া উচিত কুইন অফ কাইন্ডনেস (Queen of Kindness বা দয়ার রানী)। কারণ তিনি তার শেষ জীবনে ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) দান করেছেন এবং মৃত্যুর পর আরো আট বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫,৬০০ কোটি টাকা) দিয়ে গিয়েছেন চ্যারিটির জন্য। মিজ হেমসলির চার নাতি-নাতনির মধ্যে দুজনকে কিছুই দিয়ে যাননি। তবে তিনি ট্রাবলের জন্য ১২ মিলিয়ন ডলারের ট্রাস্ট ফান্ড খুলে যান। হেমসলি পার্ক লেইন হোটেলের ৪৬ তলার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ট্রাবল থাকতো। ওই হোটেলের শেফ (Chef, বাবুর্চি) তার জন্য স্পেশাল খাবার রান্না করতেন। হেমসলি তার উইলে লিখে যান মৃত্যুর পর তার প্রিয় পোষ্য প্রাণীটিকে দেখাশোনা করবেন তার ৮০ বছর বয়সী ভাই। কিন্তু এ কাজ করতে ভাই রাজি হননি। তিনি ট্রাবলের যত্নআত্তির ভার দেন হেমসলির স্টাফদের ওপর। কোডি বলেন, অন্য যে কোনো কুকুরের মতোই ট্রাবল। তাকে ভালোবাসতেন মিজ হেমসলি। সুতরাং তাকে আমরা অবশ্যই দেখাশোনা করবো। কাজের জন্য মিজ হেমসলি অনেক টাকাই তো দিয়ে গিয়েছেন। ট্রাবল যে এ বিশাল টাকা পেয়েছে সেটার পাবলিসিটি হওয়ার পর তাকে হত্যা ও অপহরণের হুমকি আসতে থাকে। হেমসলির মৃত্যুর পর ট্রাবলকে সরিয়ে নেয়া হয় কানেকটিকাট-এর একটি ২৮ রম্নম বিশিষ্ট বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে সম্ভবত ফ্লোরিডায়। কোডি বলেন, ট্রাবলের পরিচয় গোপন রাখায় সমস্যা হচ্ছিল। পেস্ননে নেয়ার আগে তার নাম বদলাতে হয়েছিল। ট্রাবলের বদলে তার নাম দিই ববল (Bauble বা খেলনা)। এসব নাটক ট্রাবলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না। আর্লি শো অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে একটি বাগানে ট্রাবল লাফালাফি ঝাপাঝাপি করছে। দি নিউ ইয়র্ক পোস্ট পত্রিকা দাবি করেছে, ফ্লোরিডায় সারাসোতার কাছে হেমসলিরই কোনো এক বাড়িতে ট্রাবল আছে এবং তাকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে সিকিউরিটি টিম। ট্রাবলকে দেখাশোনা করতে বছরে ৩০০,০০০ ডলার (প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা) খরচ হচ্ছে। এ খরচটা হচ্ছে তিন শিফটে রোটেটিং একটি সিকিউরিটি টিম, একজন গার্ডিয়ান এবং একজন ভেটেরেনারি সার্জনের বেতনভাতায়। ট্রাবলের লিভার প্রবলেম আছে। এ ভেটেরেনারি সার্জন বা পশু চিকিৎসক সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। এছাড়া খরচ হয় প্রতি সপ্তাহে ট্রাবলের লোম ছাটাই ও সৌন্দর্য রড়্গায়। অবশ্য সে এখন দামি খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। হোটেল শেফের তৈরি খাবার নয়, দোকান থেকে কেনা পেটফুড বা পশু খাদ্য সে খাচ্ছে। কোডি বলেন, ট্রাবল তার বেশির ভাগ সময় রিলাক্স করে আর বিকালে মাঠে খেলাধুলা করে কাটাচ্ছে। টেলিভিশনে ট্রাবলকে দেখার পর দর্শকরা টিভি কম্পানিকে ফোন করে জানতে চান, তাদের পোষা পুরম্নষ কুকুরের সঙ্গে ট্রাবলের মেটিং (mating, সঙ্গম)-এর কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। বলা বাহুল্য, তারা চাচ্ছিলেন ট্রাবলের ছানা হলে উত্তরাধিকার সূত্রে যে টাকা ছানাটি পাবে তার মালিকানা। কিন্তু মিজ হেমসলির উইলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ আছে, ট্রাবলের মৃত্যুর পর যদি কোনো টাকা থাকে তাহলে তার সবটাই সরাসরি যাবে একটি চ্যারিটিতে। মিজ হেমসলির সমাধি হয়েছে তার পারিবারিক কবরস্থানে। ট্রাবলের মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করা হবে মিজ হেমসলির পাশেই। ট্রাবল যে এখন ট্রাবলে আছে এবং আমেরিকার মতো একটি সুসভ্য দেশে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে তাতে আমি অবাক হইনি। ট্রাবলের সৌভাগ্যে সাধারণ মানুষ যে ঈর্ষা, হিংসা ও বিদ্বেষ পরায়ণ হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি দুর্নীতি সত্ত্বেও ১৫ বছরের দুর্বল গণতন্ত্রের (১৯৯১-২০০৬) সময়ে বাংলাদেশের যে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছিল তাতেও কিছু মানুষ বিচলিত হয়েছিল। ২০০৬-এর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের ইকনমিক পারফরম্যান্স নিয়ে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন ও ইংল্যান্ডের দি অবজারভার পত্রিকাসহ পশ্চিমের মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছিল। টাইমের কভারস্টোরির হেডিং ছিল, রিবিল্ডিং বাংলাদেশ, এ নেশন লং পেস্নগড বাই ন্যাচারাল ডিজাস্টার্স, পভার্টি, করাপশন অ্যান্ড ভায়োলেন্স মে ফাইনালি বি অন দি ভার্জ অফ এ হ্যাপিয়ার ফিউচার (Rebuilding Bangladesh, A nation long plagued by natural disasters, poverty, corruption and violence may finally be on the verge of happier future- বাংলাদেশ পুনর্গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও সহিংসতায় দীর্ঘকাল আক্রান্ত একটি জাতি হয়তো শেষ পর্যন্ত একটি আরো সুখী ভবিষ্যতের প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে)। অ্যালেক্স পেরি�র লেখা টাইমের এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ১০ এপ্রিল ২০০৬-এ। প্রায় একই সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রশস্তিমূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল লন্ডনের দি অবজারভার পত্রিকায়। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকার গোল্ডম্যান স্যাকস (Goldman Sachs) এর একটি রিপোর্ট বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে মাত্র ১১টিকে চিহ্নিত করেছিল সবচেয়ে অগ্রগামী রূপে। এদের মধ্যে প্রথম চারটি দেশ ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ইনডিয়া ও চায়না (Brazil, Russia, India, China� - সংড়্গেপে তাদের আদ্যাড়্গরে BRIC)। আর তাদের পরই অন্য সাতটি দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তখন যে দুর্নীতি ছিল সে কথাও টাইম লিখেছিল। কিন্তু টাইমের রায় ছিল সার্বিকভাবে বাংলাদেশ উন্নতি করছে এবং সুন্দর সুখী ভবিষ্যতের কাছাকাছি এসে পড়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব ভালো রিপোর্ট একটি বড় সুফল বয়ে আনার সূচনা করে। মিডল ইস্টের কিছু দেশ যারা ইওরোপ ও আমেরিকায় পূজি বিনিয়োগ করছিল তারা ইরাকে অ্যাংলো-আমেরিকান আগ্রাসনের পর নতুনভাবে চিন্তা ভাবনা শুরম্ন করে। তারা স্থির করে, ইওরোপ ও আমেরিকায় তাদের বিনিয়োগ যদি কোনো কারণে হঠাৎ ফ্রিজ বা জব্দ করা হয় তাহলে কিছুটা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রূপে দুটি মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশে এখনি পূজি বিনিয়োগ করে রাখা উচিত। এ দুটি দেশ হলো মালয়শিয়া ও বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে টেলিকম, ব্যাংকিং ও আরো কয়েকটি সেক্টরে মিডল ইস্টের কিছু দেশ পুজি বিনিয়োগ শুরম্ন করে। বাংলাদেশ নিজেদের চেষ্টাতেই একটা ইকনমিক ব্রেক থ্রম্ন (Break through)-র কাছে এসে পড়েছিল। মিডল ইস্টের এ পুজি বিনিয়োগ এর সঙ্গে যোগ হলে পরে এটা সুনিশ্চিত ছিল যে, বাংলাদেশ অচিরেই একটি শক্তিশালী মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ রূপে আবির্ভূত হবে। আর সেটাই হয় বাংলাদেশের কাল। আরো স্পষ্টভাবে বলতে হয়, মুসলিম শব্দটিই হয়েছে বাংলাদেশের কাল। মুসলিম গেরিলা, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদীদের বিরম্নদ্ধে পশ্চিমের, বিশেষত আমেরিকা, বৃটেনসহ ইওরোপিয়ান ইউনিয়নের যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, ইরাক ও আফগানিস্তানের পর এ যুদ্ধ বিস্তৃত হয়েছে পাকিস্তানে এবং বিস্তৃত হতে পারে ইরানে। সে ড়্গেত্রে আমেরিকা ও ইইউ বদ্ধপরিকর হয়েছে, প্রায় ১৫ কোটি মানুষের দেশ যার অধিকাংশই মুসলিম- তাকে মৌলবাদী মুক্ত রাখতে। এ পটভূমিকায় ওয়ান ইলেভেন বা ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এর এক বছর পূর্তি উপলড়্গে আমেরিকার প্রভাবশালী দৈনিক দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ১১ জানুয়ারি ২০০৮-এ ব্রোকেন বাংলাদেশ (Broken Bangladesh বা ভাঙা বাংলাদেশ) শীর্ষক একটি নিবন্ধ ছেপেছে। নিচে এ নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ দেয়া হলোঃ দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিভিউ অ্যান্ড আউটলুক জানুয়ারি ১১, ২০০৮ ভাঙা বাংলাদেশ পপ কুইজঃ একটি মুসলিম প্রধান দেশের নাম বলুন যেটি সেনা সমর্থিত সরকার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং সে সরকারটি এ বছরেই একটি জাতীয় নির্বাচন করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। দেশটির চালকের আসনে যারা আছেন তাদের সফলতা এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা দিতে পারে অথবা তাদের ব্যর্থতা তৈরি করতে পারে নৈরাজ্য এবং সন্ত্রাসী গ্রম্নপগুলোর জন্য একটি নিশ্চিত আবাস। না, এখানে পাকিস্তানের কথা বলা হচ্ছে না। আজ বাংলাদেশের মিলিটারি শাসনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। ফখরম্নদ্দীন আহমদ, যিনি এ সরকারের প্রধান, গত জানুয়ারিতে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন- সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন শেষে তিনি সংড়্গিপ্ততম সময়ের মধ্যে ড়্গমতা হস্তান্তর করবেন। জুলাই মাসে ঘোষিত তার সরকারের রোড ম্যাপ অনুসারে এটি করতে হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই। বিভিন্ন লড়্গণ থেকে আভাস পাওয়া যায়, সরকার যা বলেছে তা সিরিয়াসলিই বলেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন একটি ইলেকশন কমিশন নিয়োগ পেয়েছে এবং প্রশাসন ভোটার লিস্ট ত্রম্নটিমুক্ত করার জন্য নতুন করে ছবিসহ লিস্ট তৈরি করছে। রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয়া হয়েছে। আর সম্ভবত সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ যেটি করা হয়েছে তা হলো, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করা হয়েছে। কিন্তু আরো কিছু করার আছে। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার প্রতি এ সামরিক সরকারের আচরণ কোনো আস্থার জন্ম দিতে পারেনি। দুই ভদ্র মহিলাই দুর্নীতির অভিযোগে আটক আছেন। পাশাপাশি কয়েকশ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিক সেনা হেফাজতে আছে। দেশটি এখনো জরম্নরি আইনের অধীনে আছে। মি� আহমদকে এখন গণতন্ত্রের পুনরম্নদ্ধারে দ্রম্নততার সঙ্গে তার দায়িত্বশীলতার প্রমাণ করতে হবে কোর্ট যেন স্বচ্ছ, নিরপেড়্গভাবে অভিযুক্তদের বিচার করতে পারে অথবা তাদের ছেড়ে দিতে পারে। পাশাপাশি তাকে মিলিটারির ড়্গমতা দখলের সুপ্ত পরিকল্পনাটিকে শুরম্নতেই বাতিল করার জন্য তাদের বোঝাতে হবে। গত বছরের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সরকার চালানোর কাজ জটিল করে তুলেছে। ১৪৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম গরিব দেশ। এটা উগ্র ইসলামিক মৌলবাদীদের কর্মকাের আবাস হতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য সরকার যতো অপেড়্গা করবে এ হুমকি ততো বাড়বে। আপনারা নিশ্চয়ই লড়্গ্য করেছেন, এ নিবন্ধটির প্রতিপাদ্য বিষয়। সেটি হলো, মুসলিম মৌলবাদীর জন্ম ও বিস্তৃতি রোধের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশে অতি দ্রম্নত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আর আপনারা যেটা হয়তো লড়্গ্য করছেন না, সেটা হলো ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেনি, বাংলাদেশ ভাঙার জন্য দায়ী কারা? এবং তারা কেন ভাঙলো? আমি মনে করি, আমার মতো বাংলাদেশের প্রতিটি নেড়ি কুকুরের অধিকার আছে এ প্রশ্নটির উত্তর জানার। কারা বাংলাদেশকে ভাঙলো এবং কেন ভাঙলো? টাইম, অবজারভার এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের সব উজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণী কেন মাত্র এক বছরেই উল্টে গেল? তারা কি সেই সময়ের ভুল মূল্যায়ন করেছিল? না। তারা সেটা করেনি। বরং তাদের সঠিক মূল্যায়নই হয়ে দাড়ায় বাংলাদেশের কাল। আগেই বলেছি, বাংলাদেশের অগ্রগতি বন্ধ করা এবং বাংলাদেশকে ভাঙতে চেষ্টার প্রধান কারণ হলো ইসলামী মৌলবাদীদের জন্ম ও বিস্ত�ৃতি রোধ। সুতরাং ব্রোকেন বা ভাঙা বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী যে পশ্চিমের কয়েকটি দেশ সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝছেন। র্যাংগস বিল্ডিং দেখে আপনারা এখন জানেন ভাঙার কাজটি কতো দুরূহ হতে পারে। তাই ভাঙার কাজে বিদেশিদের দরকার হয় বাংলাদেশের কিছু সাবকন্ট্রাক্টর। এসব সাবকন্ট্রাক্টর খুজে পেতে দেরি হয় না। বিভিন্ন কারণে তারা বাংলাদেশের চলমান অবস্থা বিষয়ে ড়্গুব্ধ ছিলেন- বিশেষত বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসায়ের শীর্ষ স্তরে বড় দুর্নীতির বিস্তারে। ওই সময়ে অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে সোচ্চার ছিল একটি বাংলা দৈনিক অন্ধকার এবং একটি ইংরেজি দৈনিক কমেট (Comet, উল্কা)। এদের সঙ্গে সোচ্চার ছিল দুটি সংস্থা। এক� ট্রাবলমেকার ইন বাংলাদেশ (Troublemaker In Bangladesh, সংড়্গেপে TIB বা টিআইবি) এবং দুই� সেন্টার ফর ডেথ পলিসি (Centre for Death Policy, সংড়্গেপে CDP বা সিডিপি)। এদের উদ্দেশ্য যে অসৎ ছিল সেটা আমি বলছি না। কিন্তু আমি বলছি, এদের ফোকাস ছিল শুধু একটাইঃ দুর্নীতি। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি। করাপশন, করাপশন, করাপশন। মিডিয়ার একটি অংশ এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ দুর্নীতি আর করাপশনের কথা বলতে বলতে তাদের মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিল আর আমাদের কান ঝালাপালা করেছিল। এদের এই ক্যামপেইনের সুযোগ নেয় পশ্চিম। তারা তাদের ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাংলাদেশেও বাস্তবায়নের সুযোগ পায়। যেহেতু মিডিয়ার এ চিহ্নিত অংশটি ইসলামী মৌলবাদের বিরম্নদ্ধেও ক্যামপেইন চালিয়ে যাচ্ছিল সেহেতু তাদের সঙ্গে পশ্চিমের একটি সেতুবন্ধন সহজ হয়। পশ্চিম এবং মিডিয়া ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত ক্যামপেইনে বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি, আওয়ামী লীগ উৎসাহিত হয়। ২০০৬-এর দ্বিতীয়ার্ধে আওয়ামী লীগ মনে করে তদানীন্তন সরকারের বিরম্নদ্ধে অবিরাম ক্যামপেইনের ফসল তাদের ঘরেই উঠবে। জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ তাদের নিজস্ব লড়্গ্য অর্থাৎ ড়্গমতায় ফেরার লড়্গ্য বাস্তবায়নের জন্য ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর লাঠি-বৈঠা-লগির পস্নট তৈরি করে। বিষয়টির প্রস্তুতি দি ডেইলি কমেট-এর প্রথম পৃষ্ঠায় রিপোর্টেড হয়। এভাবেই বাঙালি জনগণের সামনে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর নাটক অভিনীত হয়। ওই দিন সংশিস্নষ্ট তিন পড়্গের তিনটি এজেন্ডা ছিল। এক� বিদেশি কূটনীতিকদের লড়্গ্য ছিল বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের প্রসার রোধ করা। দুই� মিডিয়ার একাংশ ও সুশীল সমাজের একাংশের লড়্গ্য ছিল বাংলাদেশে দুর্নীতি নির্মূল করা এবং ইসলামী মৌলবাদের বিস্তৃতি সঙ্কুচিত করা। তিন� আওয়ামী লীগের লড়্গ্য ছিল ড়্গমতায় আবার ফেরার পথ প্রশস্ত করা। ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্ত�া ছিল না। তারা ফতোয়াবাজদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও তার সহযাত্রীদের আন্দোলনের ফলে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর আগেই বাংলাদেশ একটি অচলাবস্থায় এসে যাচ্ছিল। ব্যাপক হরতাল ও অবরোধ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছিল। এদের বিপরীতে বাংলাদেশের অন্য প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সহযাত্রী জামায়াত-এর জোট একটা অনড় অবস্থান নিয়েছিল। এ সময়ে বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির পিং পং অবস্থান পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তোলে। এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- উভয় দলই টানাটানি শুরম্ন করে। এরশাদ কোন জোটে যাবেন সেটা ছিল সবচেয়ে বড় জল্পনা-কল্পনার বিষয়। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই যাবেন মনে হয় বিএনপির কাছে তখন বিএনপি আইনি কৌশলের আশ্রয় নেয়- কিন্তু তারা পরাজিত হয়। এরশাদের উক্তি, নো এরশাদ নো ইলেকশন- সত্য প্রমাণিত হয়। ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের মুখোমুখি হন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। হতাহত হন কিছু সাধারণ মানুষ। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ঢলে পড়ছে এমন প্রপাগান্ডা শুরম্ন হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশকে বাচানোর জন্য আসে ওয়ান ইলেভেন। চলে যায় ড� ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কেয়ারটেকার সরকার। আসে ড� ফখরম্নদ্দীন আহমদ এবং তার আত্মীয় ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কেয়ারটেকার সরকার। শুরম্ন হয় দুর্নীতি দমন অভিযান। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এ নতুন আপাত বৈধ সরকারকে প্রাণঢালা সমর্থন জানান। তিনি বলেন, এ সরকার তারই আন্দোলনের ফসল এবং ড়্গমতায় ফেরার পর (তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে আওয়ামী লীগই ড়্গমতায় আসবে) তিনি এ সরকারের সব কার্যক্রমকে র্যাটিফাই করে দেবেন বা বৈধতা দেবেন। ফখরম্নদ্দীন সরকারের শপথ গ্রহণের সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা হাসিমুখে তার সহযোগীদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সেই সময় অনুপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি সন্দেহ করেছিলেন ফখরম্নদ্দীনের কেয়ারটেকার সরকার আসলেই হতে চলেছে একটি ছদ্মবেশী সেনা সমর্থিত সরকার। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধটি প্রমাণ করেছে খালেদা জিয়ার ওই সময়ের মূল্যায়নটি ছিল সঠিক। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য যে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর সংশিস্নষ্ট অপর দুই পড়্গের (পশ্চিম এবং মিডিয়া ও সুশীল সমাজের একাংশ) এজেন্ডা তিনি জানতেন না। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাইনাস টু ফর্মুলায় দুই প্রধান নেত্রী হাসিনা ও খালেদাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে হবে- এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন তিনি। ফলে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার একটি চরম নিদর্শন স্থাপন করে হাসিনা স্বেচ্ছায় বিদেশ চলে যান। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার কিছু পরই তিনি তার ভুলটি বুঝতে পারেন। তিনি দেখেন প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে অনড় আছেন এবং কেয়ারটেকার সরকারের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দেশেই আছেন। খালেদার বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় এক পর্যায়ে হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসেন। এর পরের ইতিহাস আপনারা জানেন। চাদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথমে হাসিনা এবং দুর্নীতির অভিযোগে পরে খালেদা সাবজেলে বন্দি হন। মানব অধিকার লঙ্ঘন করে উভয়কে এক ধরনের সলিটারি কনফাইনমেন্ট (Solitary Confinement)-এ অর্থাৎ নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। এখনো তারা সেখানেই আছেন। ইতিমধ্যে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের বিপস্নবী (Revolutionary) এবং সংস্কার (Reformation) এজেন্ডা অবাধে বাস্তবায়িত হতে থাকে। শহরের বস্তি ও ফুটপাথ মার্কেট উচ্ছেদ, গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের কিছু অংশ উচ্ছেদ, রাজধানীর অবৈধ স্থাপনা ভাঙার অভিযান, দোকানপাটের ব্যবসায়িক সময় সীমিতকরণ, ট্যাক্স আদায় অভিযান, সঞ্চয়পত্রের ওপর ট্যাক্স আরোপ, কারফিউ জারি, যথেচ্ছ গ্রেফতার ইত্যাদি শুরম্ন হয়ে যায়। নামবিহীন হাজার হাজার মানুষের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কয়েকশ পলিটিশিয়ান ও বিজনেসম্যান গ্রেফতার হন। কেউ কেউ আগেই দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে সিঙ্গাপুর, কুয়ালা লামপুর, সিডনি, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক প্রভৃতি শহরে আশ্রয় নেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রচ ৈঅস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। গার্মেন্ট শিল্প প্রথমে এ অস্থিরতার বাইরে ছিল। হরতাল ও অবরোধের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ায় তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে কেয়ারটেকার সরকারের মিসম্যানেজমেন্ট, ইনএফিশিয়েন্সি, ইল পস্ন্যানিং (Ill Planning) ও নো পস্ন্যানিং (No Planning), নো কো-অর্ডিনেশন (No Co-ordination বা সমন্বয়হীনতা) এবং অদূরদর্শিতা (Imprudence) প্রভৃতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। বাংলাদেশে ঘটে যায় মহা বিপর্যয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ ভেঙে যায়। অবশেষে এর বিরাট ধাক্কা এসে পড়ে গার্মেন্ট শিল্পেও। সেখানে এখন তীব্র শ্রমিক অসন্তোষ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কেয়ারটেকার সরকার তাদের এ অভাবনীয় অদড়্গতা এবং চরম ব্যর্থতা পরোড়্গভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয় গত ডিসেম্বর ও এই জানুয়ারিতে ১০ জন উপদেষ্টার মধ্যে পাচজনকে বিদায় দিয়ে। তাদের বিদায় দেয়ার পর এখন পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে পাচজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন দুর্নীতি অথবা অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ তাই সঙ্গত প্রশ্ন করতে পারে এখন যে পুরনো পাচজন ও নতুন পাচজন উপদেষ্টা আছেন তাদের সফল হওয়ার কতোখানি সম্ভাবনা আছে? তারা বিদায় নিলে কি তাদের সম্পর্কেও দুর্নীতি অথবা অবৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশিত হবে? বিপস্নবী, সংস্কারপন্থী এবং কেয়ারটেকার সরকার ও তাদের সঙ্গে সংশিস্নষ্টরা হয়তো জানেন না পুজিবাদ ও মুক্তবাজারের একটি অবাঞ্ছিত কিন্তু অনিবার্য উপাদান হচ্ছে দুর্নীতি। পশ্চিম এই কঠিন সত্যটা অনেক আগেই বুঝেছে। তাই একদিকে তাদের দেশে দুর্নীতি চলছে বা চলতে দেয়া হচ্ছে এবং অন্যদিকে সীমিত পরিসরে দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়াও চলছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প চালু থাকছে। পশ্চিমে অতি সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি বড় দুর্নীতির নিউজপেপার ক্লিপিং আপনারা দেখুন। এ সবই ঘটেছে গত কয়েক মাসের মধ্যে। কিন্তু এ কারণে আমেরিকা, বৃটেন, জাপানের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পকে হুমকির মুখে পড়তে হয়নি। বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তার কারণ পশ্চিমের তুলনায় এই দেশে দুর্নীতি দমন অভিযানের ব্যাপকতা। দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে যারা প্রবক্তা তারা দুটি বড় ভুল করেছেন। এক� পুজিবাদ ও মুক্তবাজার চাইলে দুর্নীতি আসবেই এবং থাকবেই। সর্বস্তরে দুর্নীতির সিসটেম ও কালচারের ওপরই গড়ে উঠছিল বাংলাদেশ। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর বহু ব্যক্তি এ সিসটেম ও কালচারের মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন। নিম্ন শ্রেণীর ব্যক্তিরা যেমন মিটার রিডার থেকে শুরম্ন করে ট্রাফিক পুলিশ, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা, যেমন পত্রিকার সম্পাদক থেকে শুরম্ন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, যারা তাদের সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং নিজের ও স্বজনের চিকিৎসা বিদেশে করিয়েছেন অথবা বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছেন, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা বিদেশে টাকা রেখেছেন ও সম্পত্তি কিনেছেন, তারা সবাই এ দুর্নীতিপূর্ণ বাংলাদেশের সুবিধাভোগী ছিলেন। এদের মধ্যে যাদের কপাল খারাপ তাদের যেতে হয়েছে জেলে যেমন ওষুধ কম্পানির এক মালিক রহমানকে এবং যাদের কপাল ভালো তাদের যেতে হয়নি জেলে, যেমন পত্রিকা কম্পানির মালিক এক রহমানকে। শেষোক্ত রহমানের ভাগ্য আরো ভালো এই কারণে যে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল মতিনের সর্বশেষ ঘোষণাটি হচ্ছে যে ইতিপূর্বে সন্দেহভাজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের শেষ লিস্টের মধ্যে যাদের নাম ছিল অথচ যাদের বিরম্নদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়নি- তাদের আর হয়রানি করা হবে না। সুতরাং ধরা যেতে পারে পত্রিকা কম্পানির মালিক রহমান আপাতত দুর্নীতির সরকারি অভিযোগমুক্ত থাকবেন। কিন্তু সে ড়্গেত্রে আদর্শগত ও নীতিগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দুদকের অবস্থান কি দুর্বল হয়ে পড়লো না? কিছু ব্যক্তি অপ্রমাণিত অভিযোগে জেলে গেলেন এবং কিছু ব্যক্তি অপ্রমাণিত অভিযোগে জেলের বাইরে থেকে গেলেন- এই দুটি বিরোধী অবস্থানকে তারা যুক্তিগ্রাহ্য করবেন কি করে? দৈনিক অন্ধকার এবং দি ডেইলি কমেটের বক্তব্য কি হবে এ বিষয়ে? এ দুটি পত্রিকা এই বিশেষ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত� যেহেতু রাখেনি সেহেতু তারাও কি চূড়ান্ত নীতিহীনতা ও নির্লজ্জ স্বজনপ্রীতির দোষে দুষ্ট নয়? ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বাংলাদেশ ভেঙে গিয়েছে। তার কারণ কি? আমরা যদি ধরে নিই যে, গত এক বছরে দেশে কোনো বড় দুর্নীতি হয়নি, দেশ থেকে দুর্নীতি প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছে তাহলে কেন দেশের এই দুর্গতি হলো? সুনীতি আসার পর দেশে তো সুসময় বিরাজের কথা ছিল। সেটা কেন হলো না? ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ শুধু রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি সংঘাতমূলক অবস্থানে ছিল। কিন্তু ১৫ মাস পর সারা দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী পরস্পরের মুখোমুখি সংঘাতমূলক অবস্থানে এসেছে। যেমন, মিরপুর ও অন্যান্য এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী বনাম গার্মেন্ট মালিক, ঢাকা ও রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র-শিড়্গক বনাম সরকার, বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা বনাম বিক্রেতা ইত্যাদি। দুই� সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্যতম একটি বাধা হলো দুর্নীতি। কিন্তু দুর্নীতিই একমাত্র বাধা নয়। দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে সোচ্চার মহল এটি বুঝতে পারেননি। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় দরকার দড়্গতা, ভালো ম্যানেজমেন্ট, সমন্বয় সাধন, দূরদর্শিতা, ভালো ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা এবং সততা। এ কেয়ারটেকার সরকার সততা দাবি করতে পারেন কিন্তু অন্য গুণাবলী দাবি করতে পারবেন না। ফলটা হয়েছে এই যে দেশে চাল, আটা, ভোজ্য তেল, গুড়ো দুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। অথচ মানুষের কেনার ড়্গমতা বাড়েনি। মানুষের আয় একই থেকে গিয়েছে অথবা কমে গিয়েছে আরো বেকারত্বের কারণে। ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রতি ১১ জনের মধ্যে একজন হয়তো কেয়ারটেকার সরকারের বিপড়্গে ছিলেন। বাকি ১০ জন হয়তো কেয়ারটেকার সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮-এ ওয়ান ইলেভেনের বর্ষপূর্তিতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন ১১ জনের মধ্যে একজনকে হয়তো কেয়ারটেকার সরকারের পড়্গে পাওয়া যাবে- বাকি ১০ জনই হয়তো সরকারের বিপড়্গে বলবেন। কারণ গত এক বছরে বাংলাদেশ ভেঙে গিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে। এখন এই ভাঙা দেশের বিপন্ন দেশবাসীকে কিভাবে রড়্গা করা সম্ভব? রড়্গা করা আদৌ সম্ভব কি? এ প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতেই হবে। কেউ কেউ বলেন, আমরা ওয়ান ইলেভেনের আগের অবস্থায় ফিরতে চাই না। কিন্তু অধিকাংশই বলেন, আমরা ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ ফিরতে চাই না কিন্তু আমরা তার আগের দিনগুলোতে ফিরতে চাই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তার নিবন্ধের শেষ লাইনে সুস্পষ্ট পথ বাতলে দিয়েছে। তারা দ্রম্নত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপদেশ দিয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না বিপস্নবী ও সংস্কারপন্থীদের দ্বারা। সেটা সম্ভব হতে পারে দুই প্রধান নেত্রীর অধীন দুটি প্রধান দলের দ্বারা। মনে রাখতে হবে, এই দুই নেত্রীকে যতো দোষেই অভিযুক্ত করা হোক না কেন, তাদের বড় অবদান হচ্ছে দুটি পার্টিকে জাতীয় পর্যায়ে পরিণত করা। এটা এরশাদ পারেননি সামরিক শাসক হওয়া সত্ত্বেও এবং একটানা প্রায় নয় বছর ড়্গমতায় থেকেও। তার জাতীয় পার্টি নামে জাতীয় হলেও কার্যত উত্তর বাংলার একটি আঞ্চলিক ও বহু বিভক্ত পার্টি রূপে থেকে গিয়েছে। বৃটেনের লেবার ও টোরি এবং আমেরিকার ডেমক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টির মতোই বাংলাদেশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন শুধু খালেদা ও হাসিনা। সম্ভবত সে কারণেই শেষ অবধি কেয়ারটেকার সরকারের শুভবুদ্ধি হবে এই দুই নেত্রীকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এই দুই নেত্রী আগেই পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারেন যে, নির্বাচনের ফলাফল তারা মেনে নেবেন। নির্বাচন অভিযানকালে উভয় দলের নেতাকর্মীরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল আচরণ করবেন। শান্তিপূর্ণভাবে সহঅবস্থান করবেন। নির্বাচনের আগে ও পরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি বাদ দেবেন। নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী পড়্গ নিয়মিতভাবে যোগ দেবেন এবং সংসদের বিভিন্ন কমিটিতে সরকার পড়্গ ন্যায়সঙ্গত ছাড় দেবেন বিরোধী পড়্গকে। এছাড়া এককভাবে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে কিভাবে তার দলের উগ্র ও সহিংস ইমেজ বাদ দেয়া যায়। আর এককভাবে বিএনপি নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে কিভাবে তার দলের ইসলামি মৌলবাদকে প্রশ্রয়দানের ইমেজ দূর করা যায়। এই দুই নেত্রী যদি এসব গভীরভাবে বিবেচনা না করে আবার সেই আগের মতোই চলতে থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের ড়্গমা করবে না। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে বর্তমানে যারা ড়্গমতার কেন্দ্রস্থলে আছেন অর্থাৎ তিন আহমেদ নির্বাচনের পর কি করবেন? তারা কি মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন? হ্যা। তাই। দেশের এবং নিজেদের মঙ্গলার্থেই তারা মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন। আমরা জানি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ গুরম্নতর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার সেখানে আবার মেডিকাল চেকআপ করা উচিত। আমরা জানি, চিফ অ্যাডভাইজর ফখরম্নদ্দীন আহমদ ভাষণ দেয়ার সময়ে বস্ন্যাকআউট হয়ে মঞ্চে পড়ে গিয়েছিলেন। তার বিদেশে থরো (thorough) চেকআপ দরকার। আমরা এটাও জানি, আর্মি চিফ জেনারেল মইন উ আহমেদ গত ঈদুল আজহার পর সউদি আরবে থেকে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তিনিও আবার বিদেশে সেকেন্ড ওপিনিয়নের জন্য যেতে পারেন। তারা তিনজনই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এ কামনাই দেশবাসী করবে। লড়্গ্য করম্নন, মাইনাস টু ফর্মুলার মতো অন্যায়, অযৌক্তিক ও অসুখী করার ফর্মুলা এটি নয়। মাইনাস থ্রি ফর্মুলা হচ্ছে ন্যায়, যুক্তিসঙ্গত (মেডিকাল হিস্ট্রি অনুসারে) এবং সুখদায়ক। আমি নেড়ি কুত্তা। আমি শুধু নিশ্চিন্তে থাকতে চাই। আমার সুখ না হলেও চলবে। দেশবাসী যদি ন্যায্য দামে খেয়ে-পরে বাচতে পারে তাহলে আমিও বেচে থাকবো। যদিও সেটা ফ্লোরিডায় ট্রাবলের মতো আরামদায়ক জীবন হবে না তবুও এ ভাঙা দেশে নিরাপদে বেচে থাকাটাই বা কম কি?? শফিক রেহমান
গত ৩ অক্টোবর ২০০৭-এ আমি একটা ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। সেখানে প্রথমেই আমি নিজের পরিচয় দিয়েছিলাম। নতুন পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি পরিচয়টা আবার দিচ্ছি। আমি বাংলাদেশের একটি নেড়ি কুত্তা। আমার অবস্থান এতোই নিচে যে, আমাকে কুকুরও বলা হয় না। বলা হয় কুত্তা। আর নাম? আমার কোনো নাম নেই। বলা হয় নেড়ি। খাদ্য ও পুষ্টির অভাবে আমার গায়ের অনেক লোম ঝরে গিয়েছে। আমাকে ন্যাড়া দেখায়। তাই বোধহয় আমার নাম নেড়ি। ওই ইন্টারভিউতে আমি জানিয়েছিলাম আমেরিকায় ট্রাবল (Trouble বা ঝামেলা) নামে একটি মলটিজ (Maltese) জাতীয় শাদা কুকুরকে তার পালক মিজ লিওনা হেমসলি ১২ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৮৪ কোটি টাকা) তার উইলে দিয়ে গিয়েছেন। পরলোকগত মিজ হেমসলি ছিলেন একজন বিত্তশালী হোটেল মালিক। তার মৃত্যুর পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিত্তশালী কুকুর হয়েছে ট্রাবল। ওই ইন্টারভিউ ছাপা হওয়ার পর থেকে অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন, এ মিলিয়নেয়ার কুকুরটির কি হলো? সে কেমন আছে? এবং আরো অনেক ধরনের প্রশ্নই আমাকে পাঠকরা করেছেন। সংড়্গেপে উত্তরটা হলো ট্রাবল এখন বেশ ট্রাবলে আছে। জীবিত অবস্থায় মিলিয়নেয়ার হোটেলিয়ার মিজ হেমসলি ছিলেন হাড় কিপটে। নিউ ইয়র্কের হাই সোসাইটিতে তাকে বলা হতো কুইন অফ মিন (Queen of Mean বা হাড় কিপটের রানী)। এ রকম লেজেন্ডারি এক কৃপণের মৃত্যুর পর তার পালিত কুকুর ১২ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে জেনে নিউ ইয়র্কের হাই সোসাইটি স্তম্ভিত হয়েছে। মিজ হেমসলির এ অসাধারণ, বিরাট ও পাশবিক দানকে তারা মেনে নিতে পারছে না। পত্রপত্রিকাগুলো ছন্দ করে ট্রাবলের নতুন নাম দিয়েছে রিচ বিচ (Rich Bitch বা ধনী মাদি কুকুর)। ট্রাবল যে শুধু নিউ ইয়র্ক হাই সোসাইটি এবং মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তা নয়, আরো বেশি দূরভিসন্ধিমূলক গোষ্ঠীর দৃষ্টিও আকর্ষণ করেছে। এরা হলো বস্ন্যাকমেইলার এবং কিডন্যাপার। এরা ট্রাবলকে অসংখ্য হুমকি দিয়েছে। ট্রাবলের পালন ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত টিম বাধ্য হয়ে ট্রাবলের নাম ও পরিচয় বদলে ফেলেছেন। তারা নতুন নাম ও পরিচয়ে একটি প্রাইভেট জেট পেস্ননে ট্রাবলকে নিয়ে গিয়েছেন অজ্ঞাত এক স্থানে। ট্রাবলকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ওয়াকিফহাল মহল মনে করেন, দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গার্ড দিয়ে ফ্লোরিডার কোথাও রাখা হয়েছে তাকে। গোটা আমেরিকা এখন লড়্গ্য রাখছে ট্রাবলের কি হয়। মিজ হেমসলির এক সাবেক স্টাফ জন কোডি জানিয়েছেন, আমরা দৈনিক ২০ থেকে ৩০টা হুমকি পাচ্ছিলাম। এতে সবাই বিপন্ন বোধ করি। সিবিএস টেলিভিশনের আর্লি শো (Early Show) অনুষ্ঠানে জন কোডি বলেন, বস্ন্যাকমেইলাররা হুমকি দেয়, আই অ্যাম গনা কিল দি ডগ। আই অ্যাম গনা কিডন্যাপ দি ডগ। আই নিড দি টুয়েলভ মিলিয়ন ডলার (I'm gonna kill the dog. I'm gonna kidnap the dog. I need the $ 12 million� আমি কুকুরটাকে খুন করবো। আমি কুকুরটাকে কিডন্যাপ করবো। আমার সেই ১২ মিলিয়ন ডলার দরকার)। মিজ হেমসলি ছিলেন একটি হোটেল চেইন এবং বহু প্রেস্টিজিয়াস প্রপার্টির মালিক। এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের মালিক কম্পানির শেয়ারহোল্ডার ছিলেন তিনি। আগস্ট ২০০৭-এ মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৭। তার বিলিয়নেয়ার স্বামী হ্যারি মারা গিয়েছিলেন ১০ বছর আগে ১৯৯৭-এ। তার পরই জন কোডি মিজ হেমসলিকে দিয়েছিলেন ট্রাবল। আগেই বলেছি, মিজ হেমসলির নাম হয়েছিল কুইন অফ মিন। ট্যাক্স ফাকি দেয়ার অভিযোগে তার বিরম্নদ্ধে মামলা হয়েছিল। মামলা চলার সময়ে তিনি মন্ত�ব্য করেছিলেন, ওনলি দি লিটল পিপল পে ট্যাক্সেস (Only the little people pay taxes- শুধু ছোটলোকরাই ট্যাক্স দেয়)। তার এ কথার পর মিডিয়া তাকে কুইন অফ মিন টাইটেল দেয়। মিজ হেমসলির কর্মচারীরা এতে খুব ড়্গুব্ধ হয়েছেন। তারা বলেন, ওই টাইটেলের পরিবর্তে মিজ হেমসলির টাইটেল হওয়া উচিত কুইন অফ কাইন্ডনেস (Queen of Kindness বা দয়ার রানী)। কারণ তিনি তার শেষ জীবনে ১০০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৭০০ কোটি টাকা) দান করেছেন এবং মৃত্যুর পর আরো আট বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫,৬০০ কোটি টাকা) দিয়ে গিয়েছেন চ্যারিটির জন্য। মিজ হেমসলির চার নাতি-নাতনির মধ্যে দুজনকে কিছুই দিয়ে যাননি। তবে তিনি ট্রাবলের জন্য ১২ মিলিয়ন ডলারের ট্রাস্ট ফান্ড খুলে যান। হেমসলি পার্ক লেইন হোটেলের ৪৬ তলার একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ট্রাবল থাকতো। ওই হোটেলের শেফ (Chef, বাবুর্চি) তার জন্য স্পেশাল খাবার রান্না করতেন। হেমসলি তার উইলে লিখে যান মৃত্যুর পর তার প্রিয় পোষ্য প্রাণীটিকে দেখাশোনা করবেন তার ৮০ বছর বয়সী ভাই। কিন্তু এ কাজ করতে ভাই রাজি হননি। তিনি ট্রাবলের যত্নআত্তির ভার দেন হেমসলির স্টাফদের ওপর। কোডি বলেন, অন্য যে কোনো কুকুরের মতোই ট্রাবল। তাকে ভালোবাসতেন মিজ হেমসলি। সুতরাং তাকে আমরা অবশ্যই দেখাশোনা করবো। কাজের জন্য মিজ হেমসলি অনেক টাকাই তো দিয়ে গিয়েছেন। ট্রাবল যে এ বিশাল টাকা পেয়েছে সেটার পাবলিসিটি হওয়ার পর তাকে হত্যা ও অপহরণের হুমকি আসতে থাকে। হেমসলির মৃত্যুর পর ট্রাবলকে সরিয়ে নেয়া হয় কানেকটিকাট-এর একটি ২৮ রম্নম বিশিষ্ট বাড়িতে। তারপর সেখান থেকে সম্ভবত ফ্লোরিডায়। কোডি বলেন, ট্রাবলের পরিচয় গোপন রাখায় সমস্যা হচ্ছিল। পেস্ননে নেয়ার আগে তার নাম বদলাতে হয়েছিল। ট্রাবলের বদলে তার নাম দিই ববল (Bauble বা খেলনা)। এসব নাটক ট্রাবলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয় না। আর্লি শো অনুষ্ঠানে প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে একটি বাগানে ট্রাবল লাফালাফি ঝাপাঝাপি করছে। দি নিউ ইয়র্ক পোস্ট পত্রিকা দাবি করেছে, ফ্লোরিডায় সারাসোতার কাছে হেমসলিরই কোনো এক বাড়িতে ট্রাবল আছে এবং তাকে ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে সিকিউরিটি টিম। ট্রাবলকে দেখাশোনা করতে বছরে ৩০০,০০০ ডলার (প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা) খরচ হচ্ছে। এ খরচটা হচ্ছে তিন শিফটে রোটেটিং একটি সিকিউরিটি টিম, একজন গার্ডিয়ান এবং একজন ভেটেরেনারি সার্জনের বেতনভাতায়। ট্রাবলের লিভার প্রবলেম আছে। এ ভেটেরেনারি সার্জন বা পশু চিকিৎসক সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখছেন। এছাড়া খরচ হয় প্রতি সপ্তাহে ট্রাবলের লোম ছাটাই ও সৌন্দর্য রড়্গায়। অবশ্য সে এখন দামি খাবার খাওয়ার অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে। হোটেল শেফের তৈরি খাবার নয়, দোকান থেকে কেনা পেটফুড বা পশু খাদ্য সে খাচ্ছে। কোডি বলেন, ট্রাবল তার বেশির ভাগ সময় রিলাক্স করে আর বিকালে মাঠে খেলাধুলা করে কাটাচ্ছে। টেলিভিশনে ট্রাবলকে দেখার পর দর্শকরা টিভি কম্পানিকে ফোন করে জানতে চান, তাদের পোষা পুরম্নষ কুকুরের সঙ্গে ট্রাবলের মেটিং (mating, সঙ্গম)-এর কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না। বলা বাহুল্য, তারা চাচ্ছিলেন ট্রাবলের ছানা হলে উত্তরাধিকার সূত্রে যে টাকা ছানাটি পাবে তার মালিকানা। কিন্তু মিজ হেমসলির উইলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশ আছে, ট্রাবলের মৃত্যুর পর যদি কোনো টাকা থাকে তাহলে তার সবটাই সরাসরি যাবে একটি চ্যারিটিতে। মিজ হেমসলির সমাধি হয়েছে তার পারিবারিক কবরস্থানে। ট্রাবলের মৃত্যুর পর তাকে সমাধিস্থ করা হবে মিজ হেমসলির পাশেই। ট্রাবল যে এখন ট্রাবলে আছে এবং আমেরিকার মতো একটি সুসভ্য দেশে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে তাতে আমি অবাক হইনি। ট্রাবলের সৌভাগ্যে সাধারণ মানুষ যে ঈর্ষা, হিংসা ও বিদ্বেষ পরায়ণ হয়েছে এটাই স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি দুর্নীতি সত্ত্বেও ১৫ বছরের দুর্বল গণতন্ত্রের (১৯৯১-২০০৬) সময়ে বাংলাদেশের যে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নতি হয়েছিল তাতেও কিছু মানুষ বিচলিত হয়েছিল। ২০০৬-এর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের ইকনমিক পারফরম্যান্স নিয়ে আমেরিকার টাইম ম্যাগাজিন ও ইংল্যান্ডের দি অবজারভার পত্রিকাসহ পশ্চিমের মিডিয়ায় অনেক লেখালেখি হয়েছিল। টাইমের কভারস্টোরির হেডিং ছিল, রিবিল্ডিং বাংলাদেশ, এ নেশন লং পেস্নগড বাই ন্যাচারাল ডিজাস্টার্স, পভার্টি, করাপশন অ্যান্ড ভায়োলেন্স মে ফাইনালি বি অন দি ভার্জ অফ এ হ্যাপিয়ার ফিউচার (Rebuilding Bangladesh, A nation long plagued by natural disasters, poverty, corruption and violence may finally be on the verge of happier future- বাংলাদেশ পুনর্গঠন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও সহিংসতায় দীর্ঘকাল আক্রান্ত একটি জাতি হয়তো শেষ পর্যন্ত একটি আরো সুখী ভবিষ্যতের প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে)। অ্যালেক্স পেরি�র লেখা টাইমের এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল ১০ এপ্রিল ২০০৬-এ। প্রায় একই সময়ে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রশস্তিমূলক একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল লন্ডনের দি অবজারভার পত্রিকায়। এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকার গোল্ডম্যান স্যাকস (Goldman Sachs) এর একটি রিপোর্ট বিশ্বের বহু উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে মাত্র ১১টিকে চিহ্নিত করেছিল সবচেয়ে অগ্রগামী রূপে। এদের মধ্যে প্রথম চারটি দেশ ছিল ব্রাজিল, রাশিয়া, ইনডিয়া ও চায়না (Brazil, Russia, India, China� - সংড়্গেপে তাদের আদ্যাড়্গরে BRIC)। আর তাদের পরই অন্য সাতটি দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তখন যে দুর্নীতি ছিল সে কথাও টাইম লিখেছিল। কিন্তু টাইমের রায় ছিল সার্বিকভাবে বাংলাদেশ উন্নতি করছে এবং সুন্দর সুখী ভবিষ্যতের কাছাকাছি এসে পড়েছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব ভালো রিপোর্ট একটি বড় সুফল বয়ে আনার সূচনা করে। মিডল ইস্টের কিছু দেশ যারা ইওরোপ ও আমেরিকায় পূজি বিনিয়োগ করছিল তারা ইরাকে অ্যাংলো-আমেরিকান আগ্রাসনের পর নতুনভাবে চিন্তা ভাবনা শুরম্ন করে। তারা স্থির করে, ইওরোপ ও আমেরিকায় তাদের বিনিয়োগ যদি কোনো কারণে হঠাৎ ফ্রিজ বা জব্দ করা হয় তাহলে কিছুটা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রূপে দুটি মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশে এখনি পূজি বিনিয়োগ করে রাখা উচিত। এ দুটি দেশ হলো মালয়শিয়া ও বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে টেলিকম, ব্যাংকিং ও আরো কয়েকটি সেক্টরে মিডল ইস্টের কিছু দেশ পুজি বিনিয়োগ শুরম্ন করে। বাংলাদেশ নিজেদের চেষ্টাতেই একটা ইকনমিক ব্রেক থ্রম্ন (Break through)-র কাছে এসে পড়েছিল। মিডল ইস্টের এ পুজি বিনিয়োগ এর সঙ্গে যোগ হলে পরে এটা সুনিশ্চিত ছিল যে, বাংলাদেশ অচিরেই একটি শক্তিশালী মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ রূপে আবির্ভূত হবে। আর সেটাই হয় বাংলাদেশের কাল। আরো স্পষ্টভাবে বলতে হয়, মুসলিম শব্দটিই হয়েছে বাংলাদেশের কাল। মুসলিম গেরিলা, সন্ত্রাসী ও মৌলবাদীদের বিরম্নদ্ধে পশ্চিমের, বিশেষত আমেরিকা, বৃটেনসহ ইওরোপিয়ান ইউনিয়নের যুদ্ধ শেষ হচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, ইরাক ও আফগানিস্তানের পর এ যুদ্ধ বিস্তৃত হয়েছে পাকিস্তানে এবং বিস্তৃত হতে পারে ইরানে। সে ড়্গেত্রে আমেরিকা ও ইইউ বদ্ধপরিকর হয়েছে, প্রায় ১৫ কোটি মানুষের দেশ যার অধিকাংশই মুসলিম- তাকে মৌলবাদী মুক্ত রাখতে। এ পটভূমিকায় ওয়ান ইলেভেন বা ১১ জানুয়ারি ২০০৭-এর এক বছর পূর্তি উপলড়্গে আমেরিকার প্রভাবশালী দৈনিক দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ১১ জানুয়ারি ২০০৮-এ ব্রোকেন বাংলাদেশ (Broken Bangladesh বা ভাঙা বাংলাদেশ) শীর্ষক একটি নিবন্ধ ছেপেছে। নিচে এ নিবন্ধটির বাংলা অনুবাদ দেয়া হলোঃ দি ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল রিভিউ অ্যান্ড আউটলুক জানুয়ারি ১১, ২০০৮ ভাঙা বাংলাদেশ পপ কুইজঃ একটি মুসলিম প্রধান দেশের নাম বলুন যেটি সেনা সমর্থিত সরকার দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং সে সরকারটি এ বছরেই একটি জাতীয় নির্বাচন করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। দেশটির চালকের আসনে যারা আছেন তাদের সফলতা এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা দিতে পারে অথবা তাদের ব্যর্থতা তৈরি করতে পারে নৈরাজ্য এবং সন্ত্রাসী গ্রম্নপগুলোর জন্য একটি নিশ্চিত আবাস। না, এখানে পাকিস্তানের কথা বলা হচ্ছে না। আজ বাংলাদেশের মিলিটারি শাসনের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। ফখরম্নদ্দীন আহমদ, যিনি এ সরকারের প্রধান, গত জানুয়ারিতে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন- সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন শেষে তিনি সংড়্গিপ্ততম সময়ের মধ্যে ড়্গমতা হস্তান্তর করবেন। জুলাই মাসে ঘোষিত তার সরকারের রোড ম্যাপ অনুসারে এটি করতে হবে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই। বিভিন্ন লড়্গণ থেকে আভাস পাওয়া যায়, সরকার যা বলেছে তা সিরিয়াসলিই বলেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নতুন একটি ইলেকশন কমিশন নিয়োগ পেয়েছে এবং প্রশাসন ভোটার লিস্ট ত্রম্নটিমুক্ত করার জন্য নতুন করে ছবিসহ লিস্ট তৈরি করছে। রাজধানী ঢাকায় রাজনৈতিক কর্মকার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক তুলে নেয়া হয়েছে। আর সম্ভবত সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ যেটি করা হয়েছে তা হলো, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদা করা হয়েছে। কিন্তু আরো কিছু করার আছে। দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনার প্রতি এ সামরিক সরকারের আচরণ কোনো আস্থার জন্ম দিতে পারেনি। দুই ভদ্র মহিলাই দুর্নীতির অভিযোগে আটক আছেন। পাশাপাশি কয়েকশ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সাধারণ নাগরিক সেনা হেফাজতে আছে। দেশটি এখনো জরম্নরি আইনের অধীনে আছে। মি� আহমদকে এখন গণতন্ত্রের পুনরম্নদ্ধারে দ্রম্নততার সঙ্গে তার দায়িত্বশীলতার প্রমাণ করতে হবে কোর্ট যেন স্বচ্ছ, নিরপেড়্গভাবে অভিযুক্তদের বিচার করতে পারে অথবা তাদের ছেড়ে দিতে পারে। পাশাপাশি তাকে মিলিটারির ড়্গমতা দখলের সুপ্ত পরিকল্পনাটিকে শুরম্নতেই বাতিল করার জন্য তাদের বোঝাতে হবে। গত বছরের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সরকার চালানোর কাজ জটিল করে তুলেছে। ১৪৪ মিলিয়ন জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম গরিব দেশ। এটা উগ্র ইসলামিক মৌলবাদীদের কর্মকাের আবাস হতে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের জন্য সরকার যতো অপেড়্গা করবে এ হুমকি ততো বাড়বে। আপনারা নিশ্চয়ই লড়্গ্য করেছেন, এ নিবন্ধটির প্রতিপাদ্য বিষয়। সেটি হলো, মুসলিম মৌলবাদীর জন্ম ও বিস্তৃতি রোধের জন্য প্রয়োজন বাংলাদেশে অতি দ্রম্নত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। আর আপনারা যেটা হয়তো লড়্গ্য করছেন না, সেটা হলো ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেনি, বাংলাদেশ ভাঙার জন্য দায়ী কারা? এবং তারা কেন ভাঙলো? আমি মনে করি, আমার মতো বাংলাদেশের প্রতিটি নেড়ি কুকুরের অধিকার আছে এ প্রশ্নটির উত্তর জানার। কারা বাংলাদেশকে ভাঙলো এবং কেন ভাঙলো? টাইম, অবজারভার এবং গোল্ডম্যান স্যাকসের সব উজ্জ্বল ভবিষ্যদ্বাণী কেন মাত্র এক বছরেই উল্টে গেল? তারা কি সেই সময়ের ভুল মূল্যায়ন করেছিল? না। তারা সেটা করেনি। বরং তাদের সঠিক মূল্যায়নই হয়ে দাড়ায় বাংলাদেশের কাল। আগেই বলেছি, বাংলাদেশের অগ্রগতি বন্ধ করা এবং বাংলাদেশকে ভাঙতে চেষ্টার প্রধান কারণ হলো ইসলামী মৌলবাদীদের জন্ম ও বিস্ত�ৃতি রোধ। সুতরাং ব্রোকেন বা ভাঙা বাংলাদেশের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী যে পশ্চিমের কয়েকটি দেশ সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝছেন। র্যাংগস বিল্ডিং দেখে আপনারা এখন জানেন ভাঙার কাজটি কতো দুরূহ হতে পারে। তাই ভাঙার কাজে বিদেশিদের দরকার হয় বাংলাদেশের কিছু সাবকন্ট্রাক্টর। এসব সাবকন্ট্রাক্টর খুজে পেতে দেরি হয় না। বিভিন্ন কারণে তারা বাংলাদেশের চলমান অবস্থা বিষয়ে ড়্গুব্ধ ছিলেন- বিশেষত বাংলাদেশের রাজনীতি ও ব্যবসায়ের শীর্ষ স্তরে বড় দুর্নীতির বিস্তারে। ওই সময়ে অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে সোচ্চার ছিল একটি বাংলা দৈনিক অন্ধকার এবং একটি ইংরেজি দৈনিক কমেট (Comet, উল্কা)। এদের সঙ্গে সোচ্চার ছিল দুটি সংস্থা। এক� ট্রাবলমেকার ইন বাংলাদেশ (Troublemaker In Bangladesh, সংড়্গেপে TIB বা টিআইবি) এবং দুই� সেন্টার ফর ডেথ পলিসি (Centre for Death Policy, সংড়্গেপে CDP বা সিডিপি)। এদের উদ্দেশ্য যে অসৎ ছিল সেটা আমি বলছি না। কিন্তু আমি বলছি, এদের ফোকাস ছিল শুধু একটাইঃ দুর্নীতি। দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি। করাপশন, করাপশন, করাপশন। মিডিয়ার একটি অংশ এবং সুশীল সমাজের একটি অংশ দুর্নীতি আর করাপশনের কথা বলতে বলতে তাদের মুখে ফেনা তুলে ফেলেছিল আর আমাদের কান ঝালাপালা করেছিল। এদের এই ক্যামপেইনের সুযোগ নেয় পশ্চিম। তারা তাদের ইসলাম বিরোধী এজেন্ডা বাংলাদেশেও বাস্তবায়নের সুযোগ পায়। যেহেতু মিডিয়ার এ চিহ্নিত অংশটি ইসলামী মৌলবাদের বিরম্নদ্ধেও ক্যামপেইন চালিয়ে যাচ্ছিল সেহেতু তাদের সঙ্গে পশ্চিমের একটি সেতুবন্ধন সহজ হয়। পশ্চিম এবং মিডিয়া ও সুশীল সমাজের সম্মিলিত ক্যামপেইনে বাংলাদেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের একটি, আওয়ামী লীগ উৎসাহিত হয়। ২০০৬-এর দ্বিতীয়ার্ধে আওয়ামী লীগ মনে করে তদানীন্তন সরকারের বিরম্নদ্ধে অবিরাম ক্যামপেইনের ফসল তাদের ঘরেই উঠবে। জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ তাদের নিজস্ব লড়্গ্য অর্থাৎ ড়্গমতায় ফেরার লড়্গ্য বাস্তবায়নের জন্য ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর লাঠি-বৈঠা-লগির পস্নট তৈরি করে। বিষয়টির প্রস্তুতি দি ডেইলি কমেট-এর প্রথম পৃষ্ঠায় রিপোর্টেড হয়। এভাবেই বাঙালি জনগণের সামনে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর নাটক অভিনীত হয়। ওই দিন সংশিস্নষ্ট তিন পড়্গের তিনটি এজেন্ডা ছিল। এক� বিদেশি কূটনীতিকদের লড়্গ্য ছিল বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের প্রসার রোধ করা। দুই� মিডিয়ার একাংশ ও সুশীল সমাজের একাংশের লড়্গ্য ছিল বাংলাদেশে দুর্নীতি নির্মূল করা এবং ইসলামী মৌলবাদের বিস্তৃতি সঙ্কুচিত করা। তিন� আওয়ামী লীগের লড়্গ্য ছিল ড়্গমতায় আবার ফেরার পথ প্রশস্ত করা। ইসলামী মৌলবাদ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্ত�া ছিল না। তারা ফতোয়াবাজদের সঙ্গে লিখিত চুক্তি করে এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও তার সহযাত্রীদের আন্দোলনের ফলে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর আগেই বাংলাদেশ একটি অচলাবস্থায় এসে যাচ্ছিল। ব্যাপক হরতাল ও অবরোধ দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছিল। এদের বিপরীতে বাংলাদেশের অন্য প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সহযাত্রী জামায়াত-এর জোট একটা অনড় অবস্থান নিয়েছিল। এ সময়ে বাংলাদেশের একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির পিং পং অবস্থান পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তোলে। এরশাদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- উভয় দলই টানাটানি শুরম্ন করে। এরশাদ কোন জোটে যাবেন সেটা ছিল সবচেয়ে বড় জল্পনা-কল্পনার বিষয়। শেষ পর্যন্ত তিনি যখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই যাবেন মনে হয় বিএনপির কাছে তখন বিএনপি আইনি কৌশলের আশ্রয় নেয়- কিন্তু তারা পরাজিত হয়। এরশাদের উক্তি, নো এরশাদ নো ইলেকশন- সত্য প্রমাণিত হয়। ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ রাজধানী ঢাকার কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষের মুখোমুখি হন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। হতাহত হন কিছু সাধারণ মানুষ। দেশ গৃহযুদ্ধের দিকে ঢলে পড়ছে এমন প্রপাগান্ডা শুরম্ন হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশকে বাচানোর জন্য আসে ওয়ান ইলেভেন। চলে যায় ড� ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কেয়ারটেকার সরকার। আসে ড� ফখরম্নদ্দীন আহমদ এবং তার আত্মীয় ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কেয়ারটেকার সরকার। শুরম্ন হয় দুর্নীতি দমন অভিযান। আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা এ নতুন আপাত বৈধ সরকারকে প্রাণঢালা সমর্থন জানান। তিনি বলেন, এ সরকার তারই আন্দোলনের ফসল এবং ড়্গমতায় ফেরার পর (তিনি ধরেই নিয়েছিলেন যে আওয়ামী লীগই ড়্গমতায় আসবে) তিনি এ সরকারের সব কার্যক্রমকে র্যাটিফাই করে দেবেন বা বৈধতা দেবেন। ফখরম্নদ্দীন সরকারের শপথ গ্রহণের সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা হাসিমুখে তার সহযোগীদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সেই সময় অনুপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। তিনি সন্দেহ করেছিলেন ফখরম্নদ্দীনের কেয়ারটেকার সরকার আসলেই হতে চলেছে একটি ছদ্মবেশী সেনা সমর্থিত সরকার। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের নিবন্ধটি প্রমাণ করেছে খালেদা জিয়ার ওই সময়ের মূল্যায়নটি ছিল সঠিক। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য যে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর সংশিস্নষ্ট অপর দুই পড়্গের (পশ্চিম এবং মিডিয়া ও সুশীল সমাজের একাংশ) এজেন্ডা তিনি জানতেন না। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাইনাস টু ফর্মুলায় দুই প্রধান নেত্রী হাসিনা ও খালেদাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিতে হবে- এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন তিনি। ফলে রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার একটি চরম নিদর্শন স্থাপন করে হাসিনা স্বেচ্ছায় বিদেশ চলে যান। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার কিছু পরই তিনি তার ভুলটি বুঝতে পারেন। তিনি দেখেন প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়া আপসহীনভাবে অনড় আছেন এবং কেয়ারটেকার সরকারের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দেশেই আছেন। খালেদার বিশ্বাসযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা বেড়ে যেতে পারে এ আশঙ্কায় এক পর্যায়ে হাসিনা স্বদেশে ফিরে আসেন। এর পরের ইতিহাস আপনারা জানেন। চাদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগে প্রথমে হাসিনা এবং দুর্নীতির অভিযোগে পরে খালেদা সাবজেলে বন্দি হন। মানব অধিকার লঙ্ঘন করে উভয়কে এক ধরনের সলিটারি কনফাইনমেন্ট (Solitary Confinement)-এ অর্থাৎ নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। এখনো তারা সেখানেই আছেন। ইতিমধ্যে নতুন কেয়ারটেকার সরকারের বিপস্নবী (Revolutionary) এবং সংস্কার (Reformation) এজেন্ডা অবাধে বাস্তবায়িত হতে থাকে। শহরের বস্তি ও ফুটপাথ মার্কেট উচ্ছেদ, গ্রামগঞ্জের হাটবাজারের কিছু অংশ উচ্ছেদ, রাজধানীর অবৈধ স্থাপনা ভাঙার অভিযান, দোকানপাটের ব্যবসায়িক সময় সীমিতকরণ, ট্যাক্স আদায় অভিযান, সঞ্চয়পত্রের ওপর ট্যাক্স আরোপ, কারফিউ জারি, যথেচ্ছ গ্রেফতার ইত্যাদি শুরম্ন হয়ে যায়। নামবিহীন হাজার হাজার মানুষের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কয়েকশ পলিটিশিয়ান ও বিজনেসম্যান গ্রেফতার হন। কেউ কেউ আগেই দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে সিঙ্গাপুর, কুয়ালা লামপুর, সিডনি, লন্ডন, নিউ ইয়র্ক প্রভৃতি শহরে আশ্রয় নেন। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রচ ৈঅস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। গার্মেন্ট শিল্প প্রথমে এ অস্থিরতার বাইরে ছিল। হরতাল ও অবরোধের জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ায় তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে কেয়ারটেকার সরকারের মিসম্যানেজমেন্ট, ইনএফিশিয়েন্সি, ইল পস্ন্যানিং (Ill Planning) ও নো পস্ন্যানিং (No Planning), নো কো-অর্ডিনেশন (No Co-ordination বা সমন্বয়হীনতা) এবং অদূরদর্শিতা (Imprudence) প্রভৃতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে যায়। বাংলাদেশে ঘটে যায় মহা বিপর্যয়। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের ভাষায় বাংলাদেশ ভেঙে যায়। অবশেষে এর বিরাট ধাক্কা এসে পড়ে গার্মেন্ট শিল্পেও। সেখানে এখন তীব্র শ্রমিক অসন্তোষ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। কেয়ারটেকার সরকার তাদের এ অভাবনীয় অদড়্গতা এবং চরম ব্যর্থতা পরোড়্গভাবে স্বীকার করতে বাধ্য হয় গত ডিসেম্বর ও এই জানুয়ারিতে ১০ জন উপদেষ্টার মধ্যে পাচজনকে বিদায় দিয়ে। তাদের বিদায় দেয়ার পর এখন পত্রপত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে পাচজনের মধ্যে তিনজন ছিলেন দুর্নীতি অথবা অবৈধ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। সাধারণ মানুষ তাই সঙ্গত প্রশ্ন করতে পারে এখন যে পুরনো পাচজন ও নতুন পাচজন উপদেষ্টা আছেন তাদের সফল হওয়ার কতোখানি সম্ভাবনা আছে? তারা বিদায় নিলে কি তাদের সম্পর্কেও দুর্নীতি অথবা অবৈধ প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার অভিযোগ পত্রিকায় প্রকাশিত হবে? বিপস্নবী, সংস্কারপন্থী এবং কেয়ারটেকার সরকার ও তাদের সঙ্গে সংশিস্নষ্টরা হয়তো জানেন না পুজিবাদ ও মুক্তবাজারের একটি অবাঞ্ছিত কিন্তু অনিবার্য উপাদান হচ্ছে দুর্নীতি। পশ্চিম এই কঠিন সত্যটা অনেক আগেই বুঝেছে। তাই একদিকে তাদের দেশে দুর্নীতি চলছে বা চলতে দেয়া হচ্ছে এবং অন্যদিকে সীমিত পরিসরে দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়াও চলছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য শিল্প চালু থাকছে। পশ্চিমে অতি সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি বড় দুর্নীতির নিউজপেপার ক্লিপিং আপনারা দেখুন। এ সবই ঘটেছে গত কয়েক মাসের মধ্যে। কিন্তু এ কারণে আমেরিকা, বৃটেন, জাপানের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পকে হুমকির মুখে পড়তে হয়নি। বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য শিল্পকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। তার কারণ পশ্চিমের তুলনায় এই দেশে দুর্নীতি দমন অভিযানের ব্যাপকতা। দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে যারা প্রবক্তা তারা দুটি বড় ভুল করেছেন। এক� পুজিবাদ ও মুক্তবাজার চাইলে দুর্নীতি আসবেই এবং থাকবেই। সর্বস্তরে দুর্নীতির সিসটেম ও কালচারের ওপরই গড়ে উঠছিল বাংলাদেশ। নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর বহু ব্যক্তি এ সিসটেম ও কালচারের মধ্যে জীবন যাপন করছিলেন। নিম্ন শ্রেণীর ব্যক্তিরা যেমন মিটার রিডার থেকে শুরম্ন করে ট্রাফিক পুলিশ, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা, যেমন পত্রিকার সম্পাদক থেকে শুরম্ন করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, যারা তাদের সন্তানকে বিদেশে পাঠিয়েছেন এবং নিজের ও স্বজনের চিকিৎসা বিদেশে করিয়েছেন অথবা বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছেন, উচ্চবিত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা যারা বিদেশে টাকা রেখেছেন ও সম্পত্তি কিনেছেন, তারা সবাই এ দুর্নীতিপূর্ণ বাংলাদেশের সুবিধাভোগী ছিলেন। এদের মধ্যে যাদের কপাল খারাপ তাদের যেতে হয়েছে জেলে যেমন ওষুধ কম্পানির এক মালিক রহমানকে এবং যাদের কপাল ভালো তাদের যেতে হয়নি জেলে, যেমন পত্রিকা কম্পানির মালিক এক রহমানকে। শেষোক্ত রহমানের ভাগ্য আরো ভালো এই কারণে যে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রিটায়ার্ড মেজর জেনারেল মতিনের সর্বশেষ ঘোষণাটি হচ্ছে যে ইতিপূর্বে সন্দেহভাজন দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তিদের শেষ লিস্টের মধ্যে যাদের নাম ছিল অথচ যাদের বিরম্নদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়নি- তাদের আর হয়রানি করা হবে না। সুতরাং ধরা যেতে পারে পত্রিকা কম্পানির মালিক রহমান আপাতত দুর্নীতির সরকারি অভিযোগমুক্ত থাকবেন। কিন্তু সে ড়্গেত্রে আদর্শগত ও নীতিগতভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও দুদকের অবস্থান কি দুর্বল হয়ে পড়লো না? কিছু ব্যক্তি অপ্রমাণিত অভিযোগে জেলে গেলেন এবং কিছু ব্যক্তি অপ্রমাণিত অভিযোগে জেলের বাইরে থেকে গেলেন- এই দুটি বিরোধী অবস্থানকে তারা যুক্তিগ্রাহ্য করবেন কি করে? দৈনিক অন্ধকার এবং দি ডেইলি কমেটের বক্তব্য কি হবে এ বিষয়ে? এ দুটি পত্রিকা এই বিশেষ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য এখন পর্যন্ত� যেহেতু রাখেনি সেহেতু তারাও কি চূড়ান্ত নীতিহীনতা ও নির্লজ্জ স্বজনপ্রীতির দোষে দুষ্ট নয়? ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, বাংলাদেশ ভেঙে গিয়েছে। তার কারণ কি? আমরা যদি ধরে নিই যে, গত এক বছরে দেশে কোনো বড় দুর্নীতি হয়নি, দেশ থেকে দুর্নীতি প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছে তাহলে কেন দেশের এই দুর্গতি হলো? সুনীতি আসার পর দেশে তো সুসময় বিরাজের কথা ছিল। সেটা কেন হলো না? ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ শুধু রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি সংঘাতমূলক অবস্থানে ছিল। কিন্তু ১৫ মাস পর সারা দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী পরস্পরের মুখোমুখি সংঘাতমূলক অবস্থানে এসেছে। যেমন, মিরপুর ও অন্যান্য এলাকায় গার্মেন্ট কর্মী বনাম গার্মেন্ট মালিক, ঢাকা ও রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র-শিড়্গক বনাম সরকার, বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা বনাম বিক্রেতা ইত্যাদি। দুই� সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অন্যতম একটি বাধা হলো দুর্নীতি। কিন্তু দুর্নীতিই একমাত্র বাধা নয়। দুর্নীতির বিরম্নদ্ধে সোচ্চার মহল এটি বুঝতে পারেননি। সুষ্ঠুভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় দরকার দড়্গতা, ভালো ম্যানেজমেন্ট, সমন্বয় সাধন, দূরদর্শিতা, ভালো ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা এবং সততা। এ কেয়ারটেকার সরকার সততা দাবি করতে পারেন কিন্তু অন্য গুণাবলী দাবি করতে পারবেন না। ফলটা হয়েছে এই যে দেশে চাল, আটা, ভোজ্য তেল, গুড়ো দুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে গিয়েছে। অথচ মানুষের কেনার ড়্গমতা বাড়েনি। মানুষের আয় একই থেকে গিয়েছে অথবা কমে গিয়েছে আরো বেকারত্বের কারণে। ২০০৭-এর ওয়ান ইলেভেনের সময় প্রতি ১১ জনের মধ্যে একজন হয়তো কেয়ারটেকার সরকারের বিপড়্গে ছিলেন। বাকি ১০ জন হয়তো কেয়ারটেকার সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৮-এ ওয়ান ইলেভেনের বর্ষপূর্তিতে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন ১১ জনের মধ্যে একজনকে হয়তো কেয়ারটেকার সরকারের পড়্গে পাওয়া যাবে- বাকি ১০ জনই হয়তো সরকারের বিপড়্গে বলবেন। কারণ গত এক বছরে বাংলাদেশ ভেঙে গিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে। এখন এই ভাঙা দেশের বিপন্ন দেশবাসীকে কিভাবে রড়্গা করা সম্ভব? রড়্গা করা আদৌ সম্ভব কি? এ প্রশ্নের উত্তর খুজে বের করতেই হবে। কেউ কেউ বলেন, আমরা ওয়ান ইলেভেনের আগের অবস্থায় ফিরতে চাই না। কিন্তু অধিকাংশই বলেন, আমরা ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এ ফিরতে চাই না কিন্তু আমরা তার আগের দিনগুলোতে ফিরতে চাই। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল তার নিবন্ধের শেষ লাইনে সুস্পষ্ট পথ বাতলে দিয়েছে। তারা দ্রম্নত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য উপদেশ দিয়েছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না বিপস্নবী ও সংস্কারপন্থীদের দ্বারা। সেটা সম্ভব হতে পারে দুই প্রধান নেত্রীর অধীন দুটি প্রধান দলের দ্বারা। মনে রাখতে হবে, এই দুই নেত্রীকে যতো দোষেই অভিযুক্ত করা হোক না কেন, তাদের বড় অবদান হচ্ছে দুটি পার্টিকে জাতীয় পর্যায়ে পরিণত করা। এটা এরশাদ পারেননি সামরিক শাসক হওয়া সত্ত্বেও এবং একটানা প্রায় নয় বছর ড়্গমতায় থেকেও। তার জাতীয় পার্টি নামে জাতীয় হলেও কার্যত উত্তর বাংলার একটি আঞ্চলিক ও বহু বিভক্ত পার্টি রূপে থেকে গিয়েছে। বৃটেনের লেবার ও টোরি এবং আমেরিকার ডেমক্রেট ও রিপাবলিকান পার্টির মতোই বাংলাদেশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখার কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন শুধু খালেদা ও হাসিনা। সম্ভবত সে কারণেই শেষ অবধি কেয়ারটেকার সরকারের শুভবুদ্ধি হবে এই দুই নেত্রীকে বিনা শর্তে মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তবে এই দুই নেত্রী আগেই পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারেন যে, নির্বাচনের ফলাফল তারা মেনে নেবেন। নির্বাচন অভিযানকালে উভয় দলের নেতাকর্মীরা পরস্পরের প্রতি সহনশীল আচরণ করবেন। শান্তিপূর্ণভাবে সহঅবস্থান করবেন। নির্বাচনের আগে ও পরে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি বাদ দেবেন। নির্বাচনের পর সংসদে বিরোধী পড়্গ নিয়মিতভাবে যোগ দেবেন এবং সংসদের বিভিন্ন কমিটিতে সরকার পড়্গ ন্যায়সঙ্গত ছাড় দেবেন বিরোধী পড়্গকে। এছাড়া এককভাবে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে কিভাবে তার দলের উগ্র ও সহিংস ইমেজ বাদ দেয়া যায়। আর এককভাবে বিএনপি নেত্রীকে বিবেচনা করতে হবে কিভাবে তার দলের ইসলামি মৌলবাদকে প্রশ্রয়দানের ইমেজ দূর করা যায়। এই দুই নেত্রী যদি এসব গভীরভাবে বিবেচনা না করে আবার সেই আগের মতোই চলতে থাকেন তাহলে সাধারণ মানুষ তাদের ড়্গমা করবে না। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে বর্তমানে যারা ড়্গমতার কেন্দ্রস্থলে আছেন অর্থাৎ তিন আহমেদ নির্বাচনের পর কি করবেন? তারা কি মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন? হ্যা। তাই। দেশের এবং নিজেদের মঙ্গলার্থেই তারা মাইনাস থ্রি হয়ে যাবেন। আমরা জানি প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ গুরম্নতর অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার সেখানে আবার মেডিকাল চেকআপ করা উচিত। আমরা জানি, চিফ অ্যাডভাইজর ফখরম্নদ্দীন আহমদ ভাষণ দেয়ার সময়ে বস্ন্যাকআউট হয়ে মঞ্চে পড়ে গিয়েছিলেন। তার বিদেশে থরো (thorough) চেকআপ দরকার। আমরা এটাও জানি, আর্মি চিফ জেনারেল মইন উ আহমেদ গত ঈদুল আজহার পর সউদি আরবে থেকে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। তিনিও আবার বিদেশে সেকেন্ড ওপিনিয়নের জন্য যেতে পারেন। তারা তিনজনই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন এ কামনাই দেশবাসী করবে। লড়্গ্য করম্নন, মাইনাস টু ফর্মুলার মতো অন্যায়, অযৌক্তিক ও অসুখী করার ফর্মুলা এটি নয়। মাইনাস থ্রি ফর্মুলা হচ্ছে ন্যায়, যুক্তিসঙ্গত (মেডিকাল হিস্ট্রি অনুসারে) এবং সুখদায়ক। আমি নেড়ি কুত্তা। আমি শুধু নিশ্চিন্তে থাকতে চাই। আমার সুখ না হলেও চলবে। দেশবাসী যদি ন্যায্য দামে খেয়ে-পরে বাচতে পারে তাহলে আমিও বেচে থাকবো। যদিও সেটা ফ্লোরিডায় ট্রাবলের মতো আরামদায়ক জীবন হবে না তবুও এ ভাঙা দেশে নিরাপদে বেচে থাকাটাই বা কম কি?
25 avril, 2009
Inscription à :
Publier les commentaires (Atom)
Aucun commentaire:
Enregistrer un commentaire