ওয়ালিউর রহমান তত্ত্বঃ নেহরু তত্ত্বের প্রতিধ্বনি ড. মাহবুব উল্লাহ
স্টেনলি উলপার্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালি-ফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ইমেরিটাস প্রফেসর। আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের একজন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ। তার রচিত গ্রন্হগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ...তার একটি সাম্প্রতিক গ্রন্হ ..... - এই গ্রন্হে তিনি ব্রিটিশ শাসকদের ভারত ত্যাগ এবং ভারত ভাগের সময়কার ওপর আলোকপাত করেছেন। এই গ্রন্হের ১৫০ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেনঃ ........ বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না ব্রিটিশ শাসকরা ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা এ দেশবাসীর হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন ভারত ভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। দাবি উঠেছিল ভারতের মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলোকে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম এবং কিরণ শঙ্কর রায় বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক বাংলার পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিলেন; কিন্তু জওয়াহেরলাল নেহরু কিছুতেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। স্যার এরিক মাইভিল ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয়, লর্ড মাউন্টব্যাটেনের অন্যতম পরামর্শদাতা। ২৭ মে ১৯৪৭ মাইভিল জওয়াহেরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চাইলেন স্বাধীন বাংলা সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া কী। নেহরু তীব্র ভাষায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, বাংলায় হিন্দুদের চিরদিনের জন্য মুসলমানদের আধিপত্য মেনে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবটি আসলে সেরকম আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই করা হয়েছে। তিনি অবশ্য সমগ্র বাংলার হিন্দুস্তানে যোগদানের সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি। এক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নার অবস্হান ছিল সম্পুর্ণ ভিন্ন। ১৭ মে ১৯৪৭ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে জিন্নাহ জানিয়েছিলেনঃ ...... জিন্নাহর দৃষ্টিতে ভারত ভাগ করতে গিয়ে বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করা ছিল ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিকতার দিক থেকে অন্যায্য। এরকম বিভক্তি ভবিষ্যতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং এই দুই প্রদেশের জনজীবনের জন্য হবে বিপর্যয়কর। গান্ধী ও নেহরুর দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য ছিল। গান্ধী শান্তিপুর্ণভাবে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন এবং পুর্ববাংলার অধিকাংশ হিন্দু বাংলা ভাগের চাইতে স্বাধীন যুক্তবাংলাই পছন্দ করবে-এরকম একটি ধারণা গান্ধীর ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে ভারতীয় ঐতিহাসিক জয়া চ্যাটার্জির গবেষণা থেকে জানা যায়, পুর্ববঙ্গের হিন্দুরা ভারতেই যোগ দিতে চেয়েছিল। জওয়াহেরলাল নেহরু জেদ ধরলেন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুপ্রধান জেলাগুলো এবং কলকাতা অবশ্যই ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। মাউন্টব্যাটেন নেহরুর বিবেচনার সঙ্গে একমত হয়ে মেনে নিয়েছিলেন যে, পুর্ববঙ্গ পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং আজ হোক কাল হোক পুর্ববঙ্গ ভারতে যোগদান করবে। ষ্টেনলি উলপার্ট মনে করেন, �৪৭-এর সিকি শতাব্দী পর রুশ-ভারত অক্ষের অস্ত্র ও সমর্থনে বলীয়ান হয়েই পুর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। জওয়াহেরলাল নেহরু মনে করতেন আজ হোক কাল হোক, পুর্ববঙ্গ বা পুর্ব পাকিস্তান, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেটি ভারতে যোগদান করবে। আজ ভারত ভাগের ইতিহাস পড়তে গিয়ে মনে আশঙ্কা জাগে, সেরকম একটি পর্যায়ে বাংলাদেশ কি উপনীত হয়েছে? বাংলাদেশের �সুশীল� সমাজভুক্ত কিছু ব্যক্তির বল্গাহীন উক্তি শুনে সেরকম আশঙ্কা জাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের মতো শ্রেণীবিভক্ত সমাজ, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিরক্ষর ও দরিদ্র, সেখানে মানুষের চিন্তার জগতে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা; কিন্তু এই শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে বিদেশিদের তোয়াজ-তাজিম করতে তাদেরই শেখানো বুলি উচ্চারণ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোন পথে যাবে? দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে এরকম বুদ্ধিজীবী পরিচয়ধারণকারী কুলাঙ্গারদের সংখ্যা খুব কম নয়। এরা সমাজের উপরতলায় অবস্হান করে। এদের প্রতিটি উক্তি মিডিয়া ফলাও করে তুলে ধরে। ক্ষমতার সার্কেলে এদের অবস্হান বেশ দৃঢ়। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বদৌলতে এরা বড় বড় সরকারি পদে আসীন হতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র না হয়ে অবিভক্ত ভারতের একটি রাজ্য হতো, তাহলে এরা একটি করণিকের চাকরি জোগার করতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। আমি নীতিগতভাবে আমার লেখায় �সম্মানিত� ব্যক্তিদের নাম ধরে সমালোচনা করতে অভ্যস্ত নই। এরকম কাজে লিপ্ত হওয়া আমার ঔচিত্য ও শালীনতাবোধের সঙ্গে সাযুজ্যপুর্ণ নয়। এসব সত্ত্বেও আমি আজ এতই ক্ষুব্ধ ও দুঃখভারাক্রান্ত যে, ভদ্রলোকটির নাম না নিয়ে পারছি না। এজন্য আমি আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আলোচ্য ভদ্রলোকটি হলেন একজন সাবেক রাষ্ট্রদুত এবং বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ল� অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক। তার নাম ওয়ালিউর রহমান। ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ল� অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত এক কর্মশালায় এই ব্যক্তিটি তার এক অসমাপ্ত গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ৩৫ শতাংশই এসেছে কওমী মাদ্রাসা থেকে। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, কওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি নেই। তারা তো দরখাস্তই করতে পারে না। তাহলে চাস পেল কীভাবে? তিনি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি। পারার কথাও নয়। সামরিক বাহিনীর মতো একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের ব্যক্তিগত নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ তার মতো সামরিক বাহিনীবহির্ভুত ব্যক্তির থাকার কথা নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এরকম মনগড়া কথা বলার হেতুটি কী। সামরিক বাহিনী থেকে সম্প্রতি অবসর নেয়া একজন উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, হাওয়াইতে অবস্হিত মার্কিন ষ্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের এক সেমিনারে যোগদান করে সেখানেও তিনি একই ধরনের কথা বলে এসেছেন। ভদ্রলোকের হাত খুব লম্বা। দেশে হোক বিদেশে হোক-সর্বত্র দেশের নিন্দা ভাষণ করার লাইসেস তিনি পেয়ে গেছেন। তার ধারণা, বাংলাদেশ একটি �রম্ভা প্রজাতন্ত্র� (...)। এ দেশ সম্পর্কে বিদেশি প্রভুদের মনসই কথাবার্তা বললে কারোর কিছু করার নেই। আমরা এক ঠুনকো স্বাধীনতার মোহে আবিষ্ট হয়ে আছি। অজস্র দেশাত্মবোধক গান এদেশের কবিরা রচনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এসব গান ও কবিতার কোনো প্রতিফলন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচারে আছে কিনা সন্দেহ। তা না হলে প্রতিবেশী দেশের বিদেশ সচিব শিবশঙ্কর মেনন কী করে বিনা নোটিশে ঢাকা চলে এলেন? রাষ্ট্রাচারের নিয়ম অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের উপর কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। অথচ তিনি সরাসরি দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। একান্তে চল্লিশ মিনিট আলাপও করলেন। তার এই রহস্যঘেরা সফর নিয়ে নানা মহলে নানা কথা আলোচিত হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর নারায়ণ চৌধুরী বলেই দিয়েছেন, এ যাত্রা বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। সবকিছু দেখে-শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব কি নিছক মানচিত্র ও একটি পতাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে? ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্যের ওপর সামরিক বাহিনী কিংবা সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসেনি। অথচ এক্ষেত্রে কড়া প্রতিবাদ জানানোর দায়িত্ব ছিল ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশস বিভাগের। কাজটি তারা করেনি। এর ফলে বাংলাদেশে কুটনৈতিক মিশনগুলো কি ধরে নেবে না যে ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্যই সঠিক? ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্য একাধিক কারণে দেশের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তার মতো এদেশেরই একজন দায়িত্বশীল নাগরিক যখন এ ধরনের মন্তব্য করে গবেষণার দোহাই দেন, তখন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে বহির্বিশ্ব বিশেষ করে পাশ্চাত্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে? গত কয়েক বছর ধরে এদেশেরই একটি মুখচেনা মহল দেশ ও দেশের বাইরে প্রচার চালিয়েছে যে, বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ অত্যন্ত তৎপর। এদের বিরুপ প্রচারণার ফলে পাশ্চাত্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদার মুসলিম রাষ্ট্রের ভাবমুর্তিটি চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওয়ালিউর রহমান শেষ বোম শেলটির বিস্ফোরণ ঘটালেন। অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবে এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে একটি নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নেতিবাচক এই প্রচারণার হোতাদের কথা হলো, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেই মানুষ জঙ্গি হয়ে যায়। মাত্র ক�দিন আগে খোদ আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, মাদ্রাসাগুলো জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র। এসব বক্তব্যের সঙ্গে ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই জঙ্গিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যে সেনাবাহিনী জঙ্গিদের আখড়া, সেই সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ কোন দুঃখে শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করতে দেবে? এটা তো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক বাহিনীর নামে জেনারেল মইন উ আহমেদরা যে অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ ঘটান, তার জন্য অজুহাত ছিল এই হস্তক্ষেপ না ঘটালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আজ ওয়ালিউর রহমান সাহেবের বক্তব্যের ফলে সেরকম কোনো আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে কিনা, সেটাই সেনাপ্রধান ও সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন। হায় কপাল! কাকে কী বলি? ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ওয়ালিউর রহমান ও তার মতো লোকদের কদর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যে মানুষ দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে, তাকে যারা কদর করে তারাও যে দেশের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্কের বোধহয় খুব একটা সুযোগ থাকে না। পিলখানার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর অঘোষিত যুদ্ধের সুচনা করা হয়েছে। এই যুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী বিডিআর বাহিনীকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেয়ার জন্য ৬৫ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট সেনাবাহিনীকে বৃহত্তর আগ্রাসনের মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য এসেছে ওয়ালিউর রহমান তত্ত্ব। তাহলে কি বলতে হবে, ১৯৪৭-এ নেহরু পুর্ববঙ্গকে কেন্দ্র করে যে সুদুরপ্রসারী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়ন সন্নিকটে? দেশ বাঁচাতে আজ তাই বড় প্রয়োজন সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বাংলাদেশের মাটিতে বেঈমান, মোনাফেক ও শত্রুর চরদের কবর রচনা করেই আমরা পারি আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। লেখকঃ প্রফেসর, ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সুত্র, আমার দেশ, ২৫/০৪/২০০৯) ড. মাহবুব উল্লাহ
স্টেনলি উলপার্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালি-ফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ইমেরিটাস প্রফেসর। আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের একজন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ। তার রচিত গ্রন্হগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ...তার একটি সাম্প্রতিক গ্রন্হ ..... - এই গ্রন্হে তিনি ব্রিটিশ শাসকদের ভারত ত্যাগ এবং ভারত ভাগের সময়কার ওপর আলোকপাত করেছেন। এই গ্রন্হের ১৫০ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেনঃ ........ বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হয়তো জানেন না ব্রিটিশ শাসকরা ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষের শাসনক্ষমতা এ দেশবাসীর হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন ভারত ভাগ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। দাবি উঠেছিল ভারতের মুসলিমপ্রধান অঞ্চলগুলোকে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির। এ সময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম এবং কিরণ শঙ্কর রায় বাংলা ভাষাভাষীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক বাংলার পরিকল্পনা উত্থাপন করেছিলেন; কিন্তু জওয়াহেরলাল নেহরু কিছুতেই এই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে রাজি ছিলেন না। স্যার এরিক মাইভিল ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয়, লর্ড মাউন্টব্যাটেনের অন্যতম পরামর্শদাতা। ২৭ মে ১৯৪৭ মাইভিল জওয়াহেরলাল নেহরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চাইলেন স্বাধীন বাংলা সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়া কী। নেহরু তীব্র ভাষায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বললেন, বাংলায় হিন্দুদের চিরদিনের জন্য মুসলমানদের আধিপত্য মেনে নেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। স্বাধীন বাংলার প্রস্তাবটি আসলে সেরকম আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্যই করা হয়েছে। তিনি অবশ্য সমগ্র বাংলার হিন্দুস্তানে যোগদানের সম্ভাবনা নাকচ করে দেননি। এক্ষেত্রে মোহাম্মদ আলী জিন্নার অবস্হান ছিল সম্পুর্ণ ভিন্ন। ১৭ মে ১৯৪৭ লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে জিন্নাহ জানিয়েছিলেনঃ ...... জিন্নাহর দৃষ্টিতে ভারত ভাগ করতে গিয়ে বাংলা ও পাঞ্জাবকে ভাগ করা ছিল ঐতিহাসিক, অর্থনৈতিক, ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিকতার দিক থেকে অন্যায্য। এরকম বিভক্তি ভবিষ্যতে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করবে এবং এই দুই প্রদেশের জনজীবনের জন্য হবে বিপর্যয়কর। গান্ধী ও নেহরুর দৃষ্টিভঙ্গিতে পার্থক্য ছিল। গান্ধী শান্তিপুর্ণভাবে বাংলার স্বাধীনতা অর্জনকে সহায়তা করতে চেয়েছিলেন এবং পুর্ববাংলার অধিকাংশ হিন্দু বাংলা ভাগের চাইতে স্বাধীন যুক্তবাংলাই পছন্দ করবে-এরকম একটি ধারণা গান্ধীর ছিল। অবশ্য পরবর্তীকালে ভারতীয় ঐতিহাসিক জয়া চ্যাটার্জির গবেষণা থেকে জানা যায়, পুর্ববঙ্গের হিন্দুরা ভারতেই যোগ দিতে চেয়েছিল। জওয়াহেরলাল নেহরু জেদ ধরলেন পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুপ্রধান জেলাগুলো এবং কলকাতা অবশ্যই ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। মাউন্টব্যাটেন নেহরুর বিবেচনার সঙ্গে একমত হয়ে মেনে নিয়েছিলেন যে, পুর্ববঙ্গ পাকিস্তানের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং আজ হোক কাল হোক পুর্ববঙ্গ ভারতে যোগদান করবে। ষ্টেনলি উলপার্ট মনে করেন, �৪৭-এর সিকি শতাব্দী পর রুশ-ভারত অক্ষের অস্ত্র ও সমর্থনে বলীয়ান হয়েই পুর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। জওয়াহেরলাল নেহরু মনে করতেন আজ হোক কাল হোক, পুর্ববঙ্গ বা পুর্ব পাকিস্তান, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশ হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, সেটি ভারতে যোগদান করবে। আজ ভারত ভাগের ইতিহাস পড়তে গিয়ে মনে আশঙ্কা জাগে, সেরকম একটি পর্যায়ে বাংলাদেশ কি উপনীত হয়েছে? বাংলাদেশের �সুশীল� সমাজভুক্ত কিছু ব্যক্তির বল্গাহীন উক্তি শুনে সেরকম আশঙ্কা জাগা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের মতো শ্রেণীবিভক্ত সমাজ, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিরক্ষর ও দরিদ্র, সেখানে মানুষের চিন্তার জগতে নেতৃত্ব দেয় শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা; কিন্তু এই শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা যদি শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে বিদেশিদের তোয়াজ-তাজিম করতে তাদেরই শেখানো বুলি উচ্চারণ করে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোন পথে যাবে? দুর্ভাগ্যের বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে এরকম বুদ্ধিজীবী পরিচয়ধারণকারী কুলাঙ্গারদের সংখ্যা খুব কম নয়। এরা সমাজের উপরতলায় অবস্হান করে। এদের প্রতিটি উক্তি মিডিয়া ফলাও করে তুলে ধরে। ক্ষমতার সার্কেলে এদের অবস্হান বেশ দৃঢ়। স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের বদৌলতে এরা বড় বড় সরকারি পদে আসীন হতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র না হয়ে অবিভক্ত ভারতের একটি রাজ্য হতো, তাহলে এরা একটি করণিকের চাকরি জোগার করতে পারতো কিনা সন্দেহ আছে। আমি নীতিগতভাবে আমার লেখায় �সম্মানিত� ব্যক্তিদের নাম ধরে সমালোচনা করতে অভ্যস্ত নই। এরকম কাজে লিপ্ত হওয়া আমার ঔচিত্য ও শালীনতাবোধের সঙ্গে সাযুজ্যপুর্ণ নয়। এসব সত্ত্বেও আমি আজ এতই ক্ষুব্ধ ও দুঃখভারাক্রান্ত যে, ভদ্রলোকটির নাম না নিয়ে পারছি না। এজন্য আমি আগেভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আলোচ্য ভদ্রলোকটি হলেন একজন সাবেক রাষ্ট্রদুত এবং বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ল� অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক। তার নাম ওয়ালিউর রহমান। ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ল� অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স আয়োজিত এক কর্মশালায় এই ব্যক্তিটি তার এক অসমাপ্ত গবেষণা প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ৩৫ শতাংশই এসেছে কওমী মাদ্রাসা থেকে। সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, কওমী মাদ্রাসার সরকারি স্বীকৃতি নেই। তারা তো দরখাস্তই করতে পারে না। তাহলে চাস পেল কীভাবে? তিনি এ প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি। পারার কথাও নয়। সামরিক বাহিনীর মতো একটি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের ব্যক্তিগত নথি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ তার মতো সামরিক বাহিনীবহির্ভুত ব্যক্তির থাকার কথা নয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এরকম মনগড়া কথা বলার হেতুটি কী। সামরিক বাহিনী থেকে সম্প্রতি অবসর নেয়া একজন উচ্চপদস্হ কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, হাওয়াইতে অবস্হিত মার্কিন ষ্ট্র্যাটেজিক রিসার্চ ইনষ্টিটিউটের এক সেমিনারে যোগদান করে সেখানেও তিনি একই ধরনের কথা বলে এসেছেন। ভদ্রলোকের হাত খুব লম্বা। দেশে হোক বিদেশে হোক-সর্বত্র দেশের নিন্দা ভাষণ করার লাইসেস তিনি পেয়ে গেছেন। তার ধারণা, বাংলাদেশ একটি �রম্ভা প্রজাতন্ত্র� (...)। এ দেশ সম্পর্কে বিদেশি প্রভুদের মনসই কথাবার্তা বললে কারোর কিছু করার নেই। আমরা এক ঠুনকো স্বাধীনতার মোহে আবিষ্ট হয়ে আছি। অজস্র দেশাত্মবোধক গান এদেশের কবিরা রচনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এসব গান ও কবিতার কোনো প্রতিফলন আমাদের রাষ্ট্রীয় আচারে আছে কিনা সন্দেহ। তা না হলে প্রতিবেশী দেশের বিদেশ সচিব শিবশঙ্কর মেনন কী করে বিনা নোটিশে ঢাকা চলে এলেন? রাষ্ট্রাচারের নিয়ম অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের উপর কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। অথচ তিনি সরাসরি দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। একান্তে চল্লিশ মিনিট আলাপও করলেন। তার এই রহস্যঘেরা সফর নিয়ে নানা মহলে নানা কথা আলোচিত হচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর নারায়ণ চৌধুরী বলেই দিয়েছেন, এ যাত্রা বাংলাদেশকে ভারতের রাডারের বাইরে যেতে দেয়া হবে না। সবকিছু দেখে-শুনে মনে প্রশ্ন জাগে, আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব কি নিছক মানচিত্র ও একটি পতাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে? ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্যের ওপর সামরিক বাহিনী কিংবা সরকারের কাছ থেকে কোনো প্রতিবাদ আসেনি। অথচ এক্ষেত্রে কড়া প্রতিবাদ জানানোর দায়িত্ব ছিল ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশস বিভাগের। কাজটি তারা করেনি। এর ফলে বাংলাদেশে কুটনৈতিক মিশনগুলো কি ধরে নেবে না যে ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্যই সঠিক? ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্য একাধিক কারণে দেশের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক। তার মতো এদেশেরই একজন দায়িত্বশীল নাগরিক যখন এ ধরনের মন্তব্য করে গবেষণার দোহাই দেন, তখন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে বহির্বিশ্ব বিশেষ করে পাশ্চাত্যে কী ধরনের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে? গত কয়েক বছর ধরে এদেশেরই একটি মুখচেনা মহল দেশ ও দেশের বাইরে প্রচার চালিয়েছে যে, বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ অত্যন্ত তৎপর। এদের বিরুপ প্রচারণার ফলে পাশ্চাত্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে উদার মুসলিম রাষ্ট্রের ভাবমুর্তিটি চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ওয়ালিউর রহমান শেষ বোম শেলটির বিস্ফোরণ ঘটালেন। অত্যন্ত অযৌক্তিকভাবে এদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে একটি নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। নেতিবাচক এই প্রচারণার হোতাদের কথা হলো, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করলেই মানুষ জঙ্গি হয়ে যায়। মাত্র ক�দিন আগে খোদ আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, মাদ্রাসাগুলো জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র। এসব বক্তব্যের সঙ্গে ওয়ালিউর রহমানের বক্তব্য মিলিয়ে পাঠ করলে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই জঙ্গিদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যে সেনাবাহিনী জঙ্গিদের আখড়া, সেই সেনাবাহিনীকে জাতিসংঘ কোন দুঃখে শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করতে দেবে? এটা তো জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সামরিক বাহিনীর নামে জেনারেল মইন উ আহমেদরা যে অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ ঘটান, তার জন্য অজুহাত ছিল এই হস্তক্ষেপ না ঘটালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আজ ওয়ালিউর রহমান সাহেবের বক্তব্যের ফলে সেরকম কোনো আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে কিনা, সেটাই সেনাপ্রধান ও সরকারের কাছে আমাদের প্রশ্ন। হায় কপাল! কাকে কী বলি? ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর ওয়ালিউর রহমান ও তার মতো লোকদের কদর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। যে মানুষ দেশের এত বড় ক্ষতি করতে পারে, তাকে যারা কদর করে তারাও যে দেশের ক্ষতি করতে চেয়েছিল, তা নিয়ে বিতর্কের বোধহয় খুব একটা সুযোগ থাকে না। পিলখানার ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ওপর অঘোষিত যুদ্ধের সুচনা করা হয়েছে। এই যুদ্ধে ঐতিহ্যবাহী বিডিআর বাহিনীকে তছনছ করে দেয়া হয়েছে, সেনাবাহিনীর কোমর ভেঙে দেয়ার জন্য ৬৫ জন মেধাবী ও চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। এখন অবশিষ্ট সেনাবাহিনীকে বৃহত্তর আগ্রাসনের মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য এসেছে ওয়ালিউর রহমান তত্ত্ব। তাহলে কি বলতে হবে, ১৯৪৭-এ নেহরু পুর্ববঙ্গকে কেন্দ্র করে যে সুদুরপ্রসারী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, তার বাস্তবায়ন সন্নিকটে? দেশ বাঁচাতে আজ তাই বড় প্রয়োজন সঙ্কীর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে সবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলা। বাংলাদেশের মাটিতে বেঈমান, মোনাফেক ও শত্রুর চরদের কবর রচনা করেই আমরা পারি আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে। লেখকঃ প্রফেসর, ডেভেলপমেন্ট ষ্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (সুত্র, আমার দেশ, ২৫/০৪/২০০৯)
Inscription à :
Publier les commentaires (Atom)
Aucun commentaire:
Enregistrer un commentaire